বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের মাধ্যমে জোরপূর্বক রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করে একটি বিশেষ মহলকে ক্ষমতায় আনার পাঁয়তারা করছিল বলে ঢাকার সব কূটনৈতিক মিশনকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত রবিবার ঢাকার সব দূতাবাস ও হাইকমিশনে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারের কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিএনপির এই দুই নেতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর আক্রমণ করতে দলীয় কর্মীদের প্ররোচিত করে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতারা ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য সারা দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ লোককে ঢাকায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিজয় দিবসের আগে রাজধানীতে নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা, সম্পত্তির নিরাপত্তা, জনসাধারণের চলাচল এবং সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিএনপিকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রস্তাব দেয়। সেখানে বিশাল সমাবেশের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু বিএনপি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কারণ হিসেবে বিএনপি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৮ ডিসেম্বর একই স্থানে কাউন্সিল হলে তাদের কাছে অনুষ্ঠানস্থল প্রস্তুত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকবে না। বিএনপির এই বক্তব্যের পর শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে তাদের ভেন্যু প্রস্তুতের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে ছাত্রলীগের কাউন্সিল সামনে এনে ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু কোনো কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ না দেখিয়েই বিএনপি নেতারা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ব্যস্ত সড়কে সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। চিঠিতে বলা হয়, নয়াপল্টন ঢাকার ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। সেখানে অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক ভবন রয়েছে। এই এলাকায় একটি ছোট জমায়েতের ফলে জনসাধারণের চলাচলকে সীমিত করে এবং পুরো শহরে যানজটের দিকে ঠেলে দেয়। সুতরাং, সেখানে এত বড় রাজনৈতিক সমাবেশ জনসাধারণের নিরাপত্তা, সম্পত্তির নিরাপত্তা, সেইসঙ্গে জনসাধারণের চলাচল মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এ ছাড়া গত ৭ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে অননুমোদিত জমায়েতের সময় বিএনপি কর্মীদের ভাঙচুর, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের গুরুতর আহত হওয়া এবং একজন পথচারীর মৃত্যুর বিষয়টিওকে বিবেচনায় নিয়েছে পুলিশ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি জনসভা করতে না চাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ তারপরও বিকল্প ভেন্যু নিয়ে তখন কাজ করছিল। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও অনুষ্ঠানস্থলের সমস্যার একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান চেয়েছিলেন। সম্ভবত, বিএনপি নেতারা অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে একটি রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ব্যস্ত রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা, যেমনটি তারা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে করেছিল। তারা তাদের বেআইনি দাবি পূরণ করার জন্য সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে চেয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে দূতাবাসগুলোতে দেওয়া চিঠিতে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল তথ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চিঠির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যেহেতু বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে অতিরঞ্জিতভাবে নানা জিনিস উপস্থাপন করা হয় এবং তারা যাতে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় সেজন্য প্রভাবিত করা হয়, তাই মিশনগুলোকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করার স্বার্থেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্যগুলো জানানো হয়েছে।