বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অনেক ছাড় দিয়েছি, এবার আর ছেড়ে দেব না।’ গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২৪ ডিসেম্বর বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজধানীসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে গণমিছিল পালন করার কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ওই দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। দুই মাস আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। সেটি জানার পরও বিএনপি গণমিছিল কর্মসূচি দিয়ে দেশে গণ্ডগোল বাধানোর চেষ্টা করছে। আমাদের উসকানি দিচ্ছে।’ কোনো ধরনের উসকানি ও চক্রান্ত না করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, বিএনপি এখন রাজনীতির মাঠে বেপরোয়া ড্রাইভার। তারা (বিএনপি) জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য।ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড-ইউনিটের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা অংশ নেন। বেলা ১টা থেকে শুরু হওয়া শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে আসেন। মিছিলকারী নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। মিছিলকারী নেতা-কর্মীদের অনেকে একই রঙের টুপি, নারীরা একই রঙের শাড়ি পরে সমাবেশে আসেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বোঝে না। অনেক ছাড় দিয়েছি, এবার ছেড়ে দেব না। প্রস্তুত হয়ে যান, এরা ছেড়ে দেবে না। এরা ক্ষমতা ফিরে পেতে পাগল হয়ে গেছে। এ পাগলদের ঠাণ্ডা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন চারটি করে বিশ্বকাপ খেলা হয়েছে। খেলার সময় কি লোডশেডিং হয়েছে? বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ অফিসে ভাঙচুর হতো। খাম্বা আর খাম্বা। বিদ্যুৎ দেয় নাই।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখনো আমদানি করার জন্য পাঁচ মাসের রিজার্ভ শেখ হাসিনার কাছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনার সময় আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বর্তমানে বিশ্ব সংকটেও আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘আপনারা সতর্ক থাকবেন। তারা (বিএনপি) জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছে।’ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘১০ তারিখে হলো খেলা? কী হলো? বিএনপির ১০ ডিসেম্বর ভুয়া, সরকারের পতন ভুয়া, বিজয় মিছিল ভুয়া, আন্দোলন ভুয়া। খেলা হবে।’ এ সময় সমাবেশস্থলে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ রব ওঠে। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি ‘মিশন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন দাবি করে কাদের বলেন, ‘আমীর খসরু সাহেব ওয়াশিংটনে গেছেন। সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে তদবির করতে গেছেন। আমীর খসরু সাহেব, কী পেলেন? আমীর খসরুর মিশন ব্যর্থ। বিএনপি হতাশ হয়ে পড়েছে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘পাকিস্তান ছাড়া আল্লাহর দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। আমরা কেন তত্ত্বাবধায়ক আনব? মৃত ইস্যু জীবিত করতে চাইছে বিএনপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠাণ্ডা মাথায় দেশ চালাচ্ছেন এই জন্য ধন্যবাদ জানাই।’ এর আগে সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২৪ তারিখ আমাদের জাতীয় সম্মেলন। সারা দেশ থেকে আমাদের নেতা-কর্মীরা আসবে। আমরা সংঘাত চাই না। সে কারণে আপনাদের গণমিছিলের প্রোগ্রাম বাইরে করেন। ঢাকা সিটিতে সেদিন না করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।’ একই দিন ওবায়দুল কাদের কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের টার্গেট-২০৪০ সাল হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এই দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।’ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাদেক খান, হাবিব হাসান এমপি, মতিউর রহমান মতি, জহিরুল হক জিল্লু, আজিজুল হক রানা, মিজানুর রহমান, এ বি এম মাজহার আনাম, উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পী, আবদুল গাফফার প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে খোঁচাখুঁচি করে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, ‘কাদেরকে খোঁচান? মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে খোঁচাখুঁচি করে কোনো লাভ হবে না। আপনাদের কবর রচনা হবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনে বাংলার মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসবেন শেখ হাসিনা। আজকের সমাবেশে ঢাকাবাসীর যে উচ্ছ্বাস, আনন্দ, এর উল্টোটা ছিল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, তারা ১০ ডিসেম্বরও একই কাজ করতে চেয়েছিল।’ কোনো রাজনৈতিক দল ভাঙচুর বা ষড়যন্ত্র করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চুপচাপ বসে থাকবে না বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কোনো দিন কোনো ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না, পেশিশক্তিতে বিশ্বাস করে না। আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে চলছি, জনগণের সমর্থনেই আমরা রাজনীতি করি।’ মন্ত্রী বলেন, ‘গত ১০ তারিখে আমরা দেখেছি, একটি রাজনৈতিক দল, তাদের সর্বাত্মক সুবিধা দেওয়ার পরও তারা নির্দিষ্ট স্থানে সমাবেশ করার জন্য জোর ধরেছিল। আমরা তাদের বলেছিলাম, আপনারা একটি উন্মুক্ত মাঠে যান। তারা বাধ্য হয়ে একটি মাঠে গেলেন, সেখানে সমাবেশ করলেন।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি তারা পেশ করলেন। এই জায়গায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আপনারা যখন ভাঙচুর করেন, ষড়যন্ত্র করেন, তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চুপচাপ বসে থাকবে না।’