মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি শেষ

♦ আর মাত্র তিন দিন পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ♦ বাড়ছে না কমিটির কলেবর ♦ গঠনতন্ত্র সংশোধনের বেশকিছু প্রস্তাব ♦ ১৫ হাজার কাউন্সিলর, ৫০ হাজার মানুষের খাবার ব্যবস্থা ♦ বিদেশি কাউকে নয়, বিএনপিসহ অনেক দলই পাচ্ছে আমন্ত্রণ ♦ পদ্মা সেতুর ওপর নৌকা আদলে মঞ্চ

রফিকুল ইসলাম রনি

কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি শেষ

সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে আওয়ামী লীগ নেতারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আর মাত্র তিন দিন পর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ পর্যায়ে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাকি দুটোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ্র সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজন থাকছে এবার। তবে নেতা-কর্মীর উপস্থিতি কমবে না। সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের ঢল নামবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। দলের পরবর্তী নেতা নির্বাচন করতে ইতোমধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট সম্মেলন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।  দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলের কলেবর না বাড়লেও এবারের সম্মেলনে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে বেশকিছু পরিবর্তন আসতে পারে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র সংশোধনীর কাজ। দলের ২১তম সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার বিদেশি কোনো অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানাবে না আওয়ামী লীগ। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রণ পাবেন।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এর বাইরে রাজনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আমন্ত্রিতদের সমপরিমাণ উৎসুক নেতা-কর্মীও কাউন্সিলে আসবেন বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপকমিটির বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও নেতা-কর্মী কমবে না। সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এবারের সম্মেলনে সাদামাটা করা হচ্ছে।

এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। সে কারণে এবার সে বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবারের স্লোগান ঠিক করে দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’ ঠিক করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১২টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সদস্যসচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রতিটি উপকমিটিই প্রায় প্রতিদিন নিজেদের মধ্যে মিটিং করছেন, কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন। বিশেষ করে অভ্যর্থনা, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা, প্রচার-প্রকাশনা উপকমিটির ব্যস্ততা বেশি লক্ষণীয়। 

অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ, আমাদের শুভাকাক্সক্ষীদের দাওয়াত দিলেও তা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসের কূটনীতিক ছাড়া বিদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে দাওয়াতপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে।’   

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি। এবার আলোকসজ্জা একেবারেই করা হবে না বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। আগের মতো বিশাল তোরণও হবে না। সাদামাটা কিছু তোরণ হতে পারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে মঞ্চটিতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, সেখানেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব ও দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকা আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। মূলমঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলিডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে। কারণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মী উপস্থিত হবেন। সবাই মঞ্চের সামনে আসতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, বিদেশি অতিথির জন্য ভিআইপি গ্যালারি রাখা হবে। তাদের আপ্যায়নের জন্য ব্যবস্থা থাকবে।

জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের জন্য পৃথক চেয়ার এবং নাম লেখা থাকবে জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, রীতি অনুযায়ী সম্মেলনস্থলে দলীয় সভানেত্রী আসার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এবারও তাই হবে। কিন্তু জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য পৃথক পৃথক চেয়ারে নাম লেখা থাকবে যাতে তারা পতাকা উত্তোলন শেষে এসে নিজের নির্ধারিত চেয়ারে বসতে পারেন।

দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে দেশের সব মানুষের আগ্রহ থাকে। এই সম্মেলন শুধু একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলন নয়, এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে স্বপ্নও দেখায় আওয়ামী লীগ। এবারও সেই স্বপ্নের কথা থাকবে ঘোষণাপত্রে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে আওয়ামী লীগের করণীয় এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার অঙ্গীকার থাকবে ঘোষণাপত্রে। সেভাবেই কাজ চলছে। এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিভাগ বাড়ানো হচ্ছে না। পদ্মা ও মেঘনা নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ করা হবে, এমন ঘোষণা আসার পর আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে দুটি সাংগঠনিক বিভাগ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উপকমিটির আহ্বায়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, যেহেতু নতুন বিভাগ হয়নি, সাংগঠনিক বিভাগ বাড়ানোর দরকার নেই বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রথম মিটিংয়ে আমরা বলেছিলাম, তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা চিঠি দিয়ে মতামত নেব। আমরা চিঠি দিয়েছিলাম, কিছুটা মতামত পেয়েছি। তিনি বলেন, ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এ কমিটি অনেক বড়। আমাদের সভানেত্রী বলেছিলেন আর বাড়ানো যাবে না। কমিটি বেশি হলে খুব একটা কার্যকরী হবে না। আসলে এ ধরনের জাতীয় সংগঠনের কমিটি আরও ছোট হওয়া উচিত।

গঠনতন্ত্র সংশোধনীর যেসব প্রস্তাব এসেছে : জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক কলেবর না বাড়লেও গঠনতন্ত্রে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে। এর মধ্যে কেন্দ্র থেকে শুরু করে দলের সব সাংগঠনিক ইউনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণসংযোগবিষয়ক সম্পাদক ও উপকমিটির সম্পাদক পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি করেছেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ ছাড়াও মহিলা শ্রমিক লীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ থাকলেও পাশাপাশি ত্রাণ ও দুর্যোগ মোকাবিলাবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের একজন কর্মকর্তা বা সদস্য সর্বোচ্চ কতটি শাখা কমিটিতে থাকতে পারবেন সেটি স্পষ্ট করার প্রস্তাব দিয়েছেন ডাটাবেজ টিমের সদস্য নুরুল আলম পাঠান মিলন। তিনি অন্য দল থেকে যোগদানকারীদের সংগঠনের শাখা পর্যায়ের শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন ও দলীয় মনোনয়নের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করার কথাও প্রস্তাব করেছেন। আওয়ামী লীগসহ সব পর্যায়ে এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সম্পদের হিসাব আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে প্রদান বাধ্যতামূলক করার কথাও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছেন। তিনি ঘোষণাপত্রে জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচনে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলর এবং জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের জন্য নির্বাচনী ওয়ার্ডভিত্তিক অফিস স্থাপন করে জনগণের দোরগোড়ায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের কথা ঘোষণাপত্রে সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন। এগুলোসহ আরও প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো আগামী ২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তোলা হবে। কার্যনির্বাহী সংসদ অনুমোদন দিলে তা কার্যকর করা হবে। না দিলে তা হবে না।

নেতা-কর্মীদের পদচারণে ধানমন্ডির কার্যালয় : আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন ঘিরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয় নেতা-কর্মীদের পদচারণে এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। পদ-পদবি টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন করে পদ-পদবি প্রত্যাশীদের পদচারণে প্রতিদিন সরগরম হয়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হচ্ছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর এ রাজনৈতিক কার্যালয়টি।

সরেজমিন জানা গেছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাউন্সিল প্রস্তুতি সভা ছাড়া কেন্দ্রীয় (পদ-পদবিপ্রত্যাশী) এসব নেতাকে তেমন দেখা যায় না। আগে দলীয় এমপি ও মন্ত্রীদের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দেখা না গেলেও এখন তাদের পদচারণ বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল ভিড় করছেন ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার কার্যালয়ে। আবার কেন্দ্রীয় পদপ্রত্যাশী তরুণ নেতারা সমর্থকদের নিয়ে শো-ডাউন করছেন, যা অনেক সময় পরিণত হচ্ছে ছোট ছোট সমাবেশে। এসব শো-ডাউনে কর্মী-সমর্থকদেরও এখন কদর বেড়েছে।

সারা দিন আনাগোনা কিছুটা কম থাকলেও বিকাল থেকে ভিড় শুরু হয়। সন্ধ্যা হতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় নেতা-কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা-কর্মীরা আসার পরই জমে ওঠে কার্যালয়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করা, সালাম দেওয়া, তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে একের পর এক নেতা-কর্মী আসছেন। আবার নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে কেউ কেউ কার্যালয়ের সামনের সড়কে শোডাউনও দিচ্ছেন।

২২ ডিসেম্বর শেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক : আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির শেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে হতে যাচ্ছে শেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনীর খসড়া। অবহিত করা হবে কাউন্সিলের আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা। অনুমোদন দেওয়া হবে সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের প্রতিবেদন। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট সভায় তুলে ধরবেন।

এ ছাড়া সভায় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ১১টি সম্মেলন প্রস্তুতি উপ-কমিটির নেতারা তাদের প্রতিবেদন পেশ করবেন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দল পরিচালনার ব্যাপারে আগামী নেতৃত্বের প্রতি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিতে পারেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সভায় সমসাময়িক রাজনীতি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। ওইদিন সভা মূলতবি করা হবে। আবার ২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভার কাজ শুরু হবে। সভাপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শেষ হবে। পরে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নেতা নির্বাচন করা হবে। এ লক্ষ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর