দেশে কমে এসেছে ডেঙ্গুর দাপট। তবে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটির চার গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭ এর প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। ভারতেও শনাক্ত হয়েছে ভ্যারিয়েন্টটি। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। এ পরিস্থিতিতে দেশের হাসপাতালগুলোকে আবারও প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্ক্রিনিং বাড়ানো হয়েছে বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশপথে। দ্রুত করোনার চতুর্থ ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নাগরিকদের।
কমেছে ডেঙ্গু : চলতি বছর দেশে ভয়াবহ রূপ নেয় ডেঙ্গু ভাইরাস। মারা গেছেন ২৭৬ জন। দুই মাস আগেও দৈনিক ৭ শতাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতো, যার অধিকাংশই ছিল ঢাকার বাসিন্দা। পরে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ২৭ জন ও ঢাকার বাইরে ২২ জন ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়নি কারও।
করোনা নিয়ে ফের আতঙ্ক : গতকাল পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ২৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৯ জনের। সাত দিন পর ২৪ ঘণ্টায় করোনায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তবে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার দশমিক ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ছয়জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭ নিয়ে ফের আতঙ্ক বাড়ছে। নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে চীন, জাপান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশে। জাপানে একদিনেই দেড় লাখ মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে এখনো ভ্যারিয়েন্টটি ধরা না পড়লেও বৈশ্বিক যোগাযোগের কারণে রয়েছে ঝুঁকি।ওমিক্রন থেকেও চার গুণ সংক্রামক বিএফ.৭ : স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বিএফ.৭ নামে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের তান্ডব শুরু হয়েছে বিশ্বে। ওমিক্রনের চেয়েও চার গুণ বেশি সংক্রামক এ ধরনটি। ভাইরাসটির কারণে চীনসহ ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলোতে আবারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সব প্রবেশপথে স্ক্রিনিং বাড়ানো, বন্দরগুলোতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করে আইসোলেশনে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে হাসপাতালগুলোকে।
সবাইকে দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭ মূলত বিএ.৫-এর একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। এটাকে বলা হয় আর.১৮, অর্থাৎ একজন থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। নতুন ভ্যারিয়েন্টটির ভয়ানক দিক হচ্ছে এটার ইনকিউবিশন পিরিয়ড অনেক কম। খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি আক্রান্ত হবেন এবং এটি অনেক বেশিসংখ্যক মানুষকে দ্রুত সংক্রমিত করতে পারবে। এটার উপসর্গ সম্পর্কে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মতোই।
তিনি আরও বলেন, করোনার নতুন ধরন ভারতেও শনাক্ত হয়েছে। তাই দেশের সব বন্দরে র?্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
আহমেদুল কবির বলেন, চীন-ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। এ নিয়ে কারিগরি কমিটি বৈঠক করে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই যারা টিকা নেয়নি তাদের দ্রুত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কারিগরি কমিটি। সেকেন্ড বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও ষাটোর্ধ্বদের দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ে নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম, করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম, করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক প্রমুখ।