সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল জানতে চেয়েছে আইএমএফ

ঢাকায় ব্যস্ত ডিএমডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল জানতে চেয়েছে আইএমএফ

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কৌশল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহের। ৪৫০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সামনে রেখে আইএমএফের পরামর্শ বাস্তবায়নে দেশের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটসহ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল সকালে ঢাকা সফরের প্রথম দিন আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহের (ডিএমডি) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেছে আইএমএফ। বৈঠকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আইএমএফ।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক প্রত্যাশা করে বলেন, চলতি মাসের ৩১ তারিখে আইএমএফের বোর্ড সভায় ঋণ চূড়ান্ত হবে। ফেব্রুয়ারিতে মিলতে পারে ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ৪৫ কোটির প্রথম কিস্তি। ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোট ৭ কিস্তিতে মিলবে পুরো ঋণের অর্থ। তবে প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আরোপিত শর্তসমূহ পরিপালনের বিষয়ে পর্যালোচনা করবে সংস্থাটি। এমন এক সময়ে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা সফর করছেন, যখন এ সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এই সফরে ঋণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন আইএমএফের ডিএমডি। তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাংলাদেশে আইএমএফ  কাউন্টার-পার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে গতকাল। বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।  বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগুলো কীভাবে প্রণয়ন করা যায় এবং তার প্রয়োগ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির প্রভাব মোকাবিলায় আইএমএফ কোন কোন খাতে অর্থায়ন করতে পারে তা এসেছে আলোচনায়। গতকালের বৈঠকে মূলত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক প্রাধান্য পেয়েছে। ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকা পৌঁছান অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেন অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। রাজধানীর সোনারগাঁও  হোটেলে এ বৈঠক ও নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অর্থমন্ত্রী উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহকে সব বাংলাদেশির পক্ষ থেকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আমাদের জিডিপি ছিল মাত্র ৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করতে আমাদের সময় লাগে প্রায় ৩৮ বছর। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের জিডিপি এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গত বছর ৩৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে আমরা ছিলাম ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এ ক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের পর্যাপ্ত সংকুলান নিশ্চিত করতে হবে। বরাবরের মতো আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা কামনা করি।

বৈঠকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট ইত্যাদির প্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহের করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। চলমান সংকট মোকাবিলায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে ডিএমডি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সরকারের ইতোমধ্যে ঘোষিত ও মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখার জন্য তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ অনুসারে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রদানে আইএমএফ প্রাথমিকভাবে সম্মত হওয়ায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে, এ ঋণ প্রোগ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যক্রমগুলোকে সমর্থন করায় তিনি আইএমএফকে ধন্যবাদ জানান। এ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর