মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফিরে গেলেন ঢাকা সফর শেষে

কী বার্তা ডোনাল্ড লুর

জুলকার নাইন

কী বার্তা ডোনাল্ড লুর

কাগজে কলমে দুই দিনের সফর হলেও মূলত এক দিনই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরের ব্যাপ্তি। রবিবার ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি দেখা করেছেন, কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রায় সব পক্ষের সঙ্গে। এই সময়ে তিনি প্রায় সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকারের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের বার্তা দিয়ে গেছেন। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করছে, সেই ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে এ সফরে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন দিক নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে ঢাকার কর্মকর্তাদের ভাবনা জেনে গেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সফরে ডোনাল্ড লু স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সব প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। সফরে তিনি চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান গতিপথের প্রশংসা করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য নতুন উপায় ও পন্থা অন্বেষণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি একাধিক বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এসব আলোচনায় ডোনাল্ড লুকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ডোনাল্ড লু এ প্রতিশ্রুতি পেয়ে এর প্রতিফলন ও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের বিষয়টি যে যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করবে সে কথা জানিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে কোনো সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র যে পরামর্শ দিতেই থাকবে, সে কথাও জানিয়ে গেছেন ডোনাল্ড লু। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সবার রাজনীতি করার অধিকারের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে একাধিক দফায়। এমনকি এক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সরাসরি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদও দেওয়া হয়েছে। আলোচনায় দেশের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগের বিষয়টি সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার উত্তরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো দেশের গণতন্ত্রই ত্রুটিমুক্ত নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও যে ত্রুটিমুক্ত নয়, তা জানানো হয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিকে। সংবিধানের সব বিধিবিধান মেনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভরসা রাখতে চায় তা বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তারা। এ ছাড়া বৈঠকগুলোয় জিএসপি পুনর্বহাল এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরতের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। মানবাধিকার আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় প্রতিটি দেশেই যে জনগণের স্বাধীনতা ও মর্যাদার অধিকার সমুন্নত রাখতে নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ, তা উল্লেখ করেছেন। জানা যায়, ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে পররাষ্ট্র কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ডোনাল্ড লু। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান লু। এর আগে এ অঞ্চলে একাধিক দেশে সফর করলেও ঢাকায় এটি ছিল তাঁর প্রথম সফর। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসা লু রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তাঁর দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর তিনি গুলশানে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। প্রথমে তিনি মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে তাঁর সম্মানে পররাষ্ট্র সচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন ডোনাল্ড লু। তিনি সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। কথা বলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। রাতে তিনি ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে ভোজে যোগ দেন। আরও কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের আয়োজনে। রবিবার মধ্যরাত ২টার দিকে ঢাকা ত্যাগ করেন। গতকাল ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের দুই মন্ত্রী।

ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর সঙ্গে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তাতে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা বন্ধ হোক তা তাঁরা চান না। আমেরিকার সরকার বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে দেখতে চায়। তারা চায় এ দেশের মানবাধিকার যেন আরও ওপরে থাকে। তারা চায় এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। উভয়ের আলোচনায় নির্বাচনের প্রসঙ্গও এসেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচন বর্তমানে যে সংবিধান আছে সে অনুযায়ী হবে। নির্বাচনের ৯০ দিন আগেই আমাদের সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যায়। সরকারের সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা মন্ত্রীরা শুধু অফিস ওয়ার্ক করি। কাজেই আমি মনে করি আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ যারা নির্বাচন কাজে সব সময় থাকে তারা প্রস্তুত আছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তিনি বলেন, আমরা বিএনপিকে বিভিন্ন জনসভা করতে দিচ্ছি এজন্য তারা আমাদের প্রশংসা করেছে। তবে সমাবেশের নামে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, রাস্তায় ব্যারিকেড- এসব বিষয় আমেরিকার সরকার সমর্থন করে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা বলেছে র‌্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা উত্তরণে বাংলাদেশ সঠিক পথেই হাঁটছে। যেভাবে চলছে এটা যদি চলমান থাকে তাহলে নিষেধাজ্ঞা অচিরেই শেষ হবে। তারা বলেছে গত দুই বছরে র‌্যাব ভালো কাজ করেছে। র‌্যাব ভালোভাবে জঙ্গিদের ও মাদক মোকাবিলা করেছে। তাহলে র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে তারা বলেছে নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলে একটা জটিলতার মধ্যে পড়ে যেতে হয়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল পৃথক দুটি সমাবেশে বলেছেন, ডোনাল্ড লুকে ত্রুটিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর নিষেধাজ্ঞা আসবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর