রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোট বাড়াতে উঠান বৈঠকে জোর আওয়ামী লীগের

রফিকুল ইসলাম রনি

ভোট বাড়াতে উঠান বৈঠকে জোর আওয়ামী লীগের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতেই ভোটারদের মন জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য প্রাথমিকভাবে একাধিক করণীয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উঠান বৈঠকে জোর দিয়েছেন দলটির নেতারা। সাংগঠনিক কাজ চলমান রাখার পাশাপাশি টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ কী কী করেছে, ক্ষমতায় আসার আগের পরিস্থিতি কী ছিল, সেগুলোও তুলে ধরা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সংসদীয় আসন ধরে পৃথক বুকলেট ছাপানো হবে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তারা বলছেন, চলতি মাস থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে যাচ্ছেন। যেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়নি, সেখানে সম্মেলন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আর যেখানে সম্মেলন হয়েছে, সেখানে কর্মিসভা ও উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। এসব সভা ও বৈঠকে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একটা হচ্ছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়ায় জনগণকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে আওয়ামী লীগকে কেন ক্ষমতায় আনতে হবে সেগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে এলো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন নয়। একটি নির্বাচন শেষ হলে আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করি। বিগত কয়েক বছর ধরেই সাংগঠনিক কর্মকান্ড, জনগণের কাছে যাওয়া-এসব নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ। তবে এখন আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি, উঠান বৈঠকে উন্নয়ন প্রচার এবং বিগত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে কী পরিস্থিতি ছিল সেগুলো জনগণকে মনে করিয়ে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কী কী করেছি,      আগামীতে কী কী করতে চাই সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরব। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় এমপিরাও জনগণের কাছে উন্নয়ন প্রচার করবেন এমন নির্দেশনা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন।’  

জানা গেছে, ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের এমপিদের গত ১৪ বছরের উন্নয়ন এবং বিগত বিএনপি-জামায়াতের সময়ের অবস্থান তুলে ধরার নির্দেশ দেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেও দলের জাতীয় পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠে কাজ করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে দলের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটি উন্নয়ন চিত্র বুকলেট আকারে ছাপানোর জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন একটি সারাংশ তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই সেগুলো ছাপিয়ে সারা দেশে দলীয় এমপিদের, দলের জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের প্রচার সম্পাদকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখানে টানা ১৪ বছরের উন্নয়ন চিত্রের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের সময়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হবে।

এ প্রসঙ্গে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টানা ১৪ বছরে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে একটা বুকলেট ছাপানো হবে। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের আমলে কেমন ছিল, বর্তমানে কী কী হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বুকলেট ছাপানোর কাজ অনেকাংশে এগিয়ে এনেছি। খুব শিগগিরই তা ছাপানো হবে। এগুলো জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের প্রচার সম্পাদকদের পাঠানো হবে। সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে কী কী থাকবে সেগুলোও তুলে ধরা হবে দলের প্রচার প্রকাশনায়।’ কাগজ আকারে ছাপানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় এবার নারী নেত্রী ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাজে লাগানো হবে। কারণ পুরুষদের চেয়ে নারীরা নারী ভোটারদের কাছে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। সে কারণে নারী সংগঠন ও নেত্রীদের কাজে লাগানো হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটের মাঠে নারীরা একটি বড় ফ্যাক্টর। আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই নারীদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিধবা নারীদের ভাতা, নারীদের ক্ষমতায়নে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা এবং সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সবক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে যে কাজ করেছে সেগুলো নারীদের মাঝে তুলে ধরব। এ জন্য এখন নারী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করছি।’

জানা গেছে, গত ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দায়িত্ব পাওয়ার পর নেতারা তৃণমূলে ছুটে চলেছেন। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে সাজানোর পাশাপাশি জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বেশি ছুটছেন বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে। সেখানে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে সফল করতে জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা ও কর্মিসভা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গতকালও নাটোরে বর্ধিত সভা করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপাতত প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর জনসভা সফল করা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা-কর্মী সভা করে চলেছি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা শেষ হলে বিভাগের ৮২টি সাংগঠনিক উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটির সম্মেলন বাকি আছে। আমরা এখন উঠান বৈঠকে জোর দিচ্ছি। সরকারের টানা সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনও জনগণকে মনে করিয়ে দেব। আগামীতে কেন আওয়ামী লীগ সরকার প্রয়োজন সে জন্য ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করব।’

সর্বশেষ খবর