শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংসদে জানান, র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন তিনি। জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর     টেবিলে উত্থাপিত হয়। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করি। বৈঠকে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি।’ তিনি বলেন, ‘ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেশনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলনে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল সিসনের সাক্ষাৎ করে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আলোচনা করি। এ ছাড়া ওই সময় আমাদের পররাষ্ট্র সচিব মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড লু, কাউন্সিলর ডেরেক চোলেটসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।’ তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয়। ওই সময় ডোনাল্ড লু বর্তমান র‌্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শুরু থেকেই এর সমাধানের জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

কূটনীতিকদের কাছে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে : সরকারি দলের সদস্য আবুল কালাম আজাদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘হ্যাঁ, বাংলাদেশে কর্মরত কতিপয় বিদেশি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য রাখেন। তাদের এ ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা কূটনীতিকদের কাছে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার পালন করে দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, কিছু বিদেশি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, যা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য না করে যথাযথ দফতরগুলোর মাধ্যমে তাদের জানানোর জন্য দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

বিরোধী দল ও কিছু গণমাধ্যম বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্য দিতে উৎসাহিত করে : নারী সংসদ সদস্য মমতা হেনা লাভলীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কূটনীতিকদের স্বচ্ছন্দ চলাচলসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে থাকে। কূটনীতিকরা দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তবে আশা করি, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয়-অনুষ্ঠান থেকে কূটনীতিকরা বিরত থাকবেন। তবে আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বিরোধী দল ও কিছু গণমাধ্যম তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্য দিতে সময় সময় উৎসাহিত করে, যা অন্যান্য দেশে প্রচলিত নয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েনা কনভেনশনের বিধান উল্লেখ করে বলেন, ‘সরকার বিদেশি কোনো কূটনীতিককে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বাধা প্রদান করবে না। আশা করি এসব অনুষ্ঠানে কূটনীতিকরা শিষ্টাচার বজায় রাখবেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন।’

শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোই লক্ষ্য : সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে টেকসইভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফেরত পাঠানোই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রত্যাবাসন-বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় পাইলট উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়েও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক একটি রেজল্যুশন গৃহীত হয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে ভোট দেয়নি, যা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উদ্যোগের সাফল্য বলে বিবেচনা করা যায়। এই রেজল্যুশন গৃহীত হওয়ার ফলে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত আগস্টে উদ্ভূত সীমান্ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, অধিদফতরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

সর্বশেষ খবর