মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ তুরস্ক সিরিয়া

লাশ উদ্ধার ২৬০০, আহত ৮০০০, চাপা পড়েছে অনেক

প্রতিদিন ডেস্ক

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ তুরস্ক সিরিয়া

সিরিয়ার জ্যান্দারিস শহরে বিধ্বস্ত ভবন থেকে উদ্ধার কার্যক্রম-এএফপি

প্রায় ৮৪ বছর পর ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায়। গতকাল ভোরে প্রথম দফায় ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প শুরু হয় সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরে। এর ১২ ঘণ্টা পর আরেক দফা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রথম দফা ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল ৪০ সেকেন্ড। ভূমিকম্পে মুহূর্তেই ধসে পড়ে অন্তত আড়াই হাজারের বেশি ভবন ও স্থাপনা। লন্ডভন্ড হয়ে যায় তুর্কি শহর। ঘুমন্ত মানুষ বিধ্বস্ত ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়েন। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ওইসব ধ্বংসস্তূপ থেকে ২৬০০ মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তুরস্কে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গতকাল ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। প্রায় ৮৪ বছর পর এমন শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক। পরে দুপুর বেলা আরও একটি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে একই এলাকার আশপাশে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, তুরস্কের ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় ভারী বৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর তাপমাত্রাও নামতে পারে ৩-৪ ডিগ্রিতে। এদিকে তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় জানান, ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত ১ হাজার ৭১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছেন। তাছাড়া তুরস্কের গাজিয়ানতেপ ও কাহরামানমারাস প্রদেশেই ৯ শতাধিক ভবন ধসে পড়েছে। এরই মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের খবর অনুযায়ী, দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত ৯০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দেড় হাজার জন। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে আলেপ্পো, হামা, লাতাকিয়া ও তারতুসের মতো শহরগুলো। এ ছাড়া সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এখনো অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক হতে পারে। দ্বিতীয় ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। এই ভূমিকম্পের এপিসেন্টার ছিল খারমানমারাসের শহরের কাছে। সর্বশেষ ভূমিকম্প দামেস্কতেও অনুভূত হয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানানো হয়নি। খবরে বলা হয়, হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অবস্থায় রয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৪৫টি দেশ তুরস্ককে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।

তুরস্কের আদানা এলাকায় ভবন ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত, মৃতদেহ নিয়ে আর্তনাদ   -এএফপি

হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা : তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে তুরস্কেই মারা গেছে ১২০০ জনের বেশি মানুষ। অন্যদিকে সিরিয়ায় মারা গেছেন সহস্রাধিক। ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও। ১৯৯৯ সালের পর এটাই তুরস্কে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। পাওয়া খবর অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছে হতাহতদের দেহ। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে। দুই দেশেই হতাহতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এ ঘটনাকে গত ৮৪ বছরের মধ্যে তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন। ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোগান। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর