শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে

চাপা পড়া মানুষের বাঁচার আকুতি

♦ লাশ উদ্ধার ১১ হাজার ছাড়িয়েছে ♦ নিহত ২০ হাজার ছাড়ানোর শঙ্কা ♦ রাতদিন চলছে উদ্ধার অভিযান ♦ ক্ষতিগ্রস্ত ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ ♦ আহত ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার

প্রতিদিন ডেস্ক

চাপা পড়া মানুষের বাঁচার আকুতি

সিরিয়ার আলেপ্পোয় ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবনে কেউ বেঁচে আছে কি না চলছে খোঁজ। তুরস্কে স্বজনের কান্না -এএফপি

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক এবং সিরিয়ায় এখন শুধুই আর্তনাদ। মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। ভেঙে পড়া হাজার হাজার ভবনের নিচ থেকে অনবরত বেরিয়ে আসছে মৃত ও অর্ধমৃতদের দেহ। এসব ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে অসংখ্য মানুষ। তাদের উদ্ধারে রাতদিন টানা অভিযান চলছে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। এ উদ্ধার অভিযানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ থেকেও একটি দল পাঠানো হচ্ছে। এদিকে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় সরকারিভাবে প্রকাশ করা খবরে বলা হয়, তুরস্কে ৮ হাজার ৫৭৪ জন এবং সিরিয়ায় ২ হাজার ৬৬২ জন মারা গেছেন। মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ২৩৬ জন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঠিক এ অবস্থার মধ্যেও গত সোমবারের পর মঙ্গলবারও তুরস্কে আরেক দফা ভূমিকম্প আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে। সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি। ভূমিকম্প এলাকা পরিদর্শন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানান, শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া কয়েক হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারে দিনরাত কাজ করছে উদ্ধারকারী দল। খবরে বলা হয়, আটকে পড়া ব্যক্তিদের আত্মীয়রা ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষা করছেন। তাদের এখনো আশা, স্বজনদের হয়তো জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তীব্র শীতের কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে উঠেছে। গৃহহীনদের দুর্দশা বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নেই। ফলে উদ্ধারকারীরা হিমশিম খাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর অনেকগুলো শক্তিশালী পরাঘাত ও দুই দফা ভূমিকম্প হয়। এতে দুই দেশে ধসে পড়েছে হাজার হাজার ভবন। এসব ভবনের নিচে আটকা পড়েছে অগণিত মানুষ। ধ্বংসস্তূপ যত সরানো হচ্ছে লাশের সংখ্যা তত বাড়ছে। ভূমিকম্পে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে গতকাল আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলেছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব এলাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের কারণে সেখানকার সবাই কোনো না কোনোভাবে সংকটে পড়েছেন। দুই দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে আছে। ভূমিকম্পে সিরিয়ায়ও হাসপাতালসহ হাজারো ভবন ধসে পড়েছে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ। ভূমিকম্পে তুরস্কে আহতের সংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর সিরিয়ায় এ সংখ্যা ৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টা পরও চলছে উদ্ধারকাজ। এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছে। সময় যত যাচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা লোকদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। খবরে আরও বলা হয়, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরে সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। বিস্ফোরণে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তীব্র শীতের মধ্যে উষ্ণ থাকতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বেঁচে যাওয়া বাসিন্দাদের। মিলছে না পেট্রলও। এখানে প্রায় ১০০ লোক কম্বল মুড়ি দিয়ে রাত কাটিয়েছেন স্থানীয় একটি বিমানবন্দরের টার্মিনালে। কাহরামানমারাস শহরে আলী সাগিরোগ্লু নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের কাছে জরুরি সেবা পাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনতে পারছি না। আমার ভাগনেকে ফেরাতে পারছি না। চারদিকে দেখুন, এখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নেই। আমি গত দুই দিনে এখানে কোনো সরকারি লোক দেখিনি। বাচ্চারা ঠাণ্ডায় জমছে।’

সর্বশেষ খবর