শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চারদিকে লাশের গন্ধ

প্রতিদিন ডেস্ক

চারদিকে লাশের গন্ধ

তুরস্কে রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ৭২ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার ১৬ বছরের মেলদা -এএফপি

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়াজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। ৭২ ঘণ্টা পর ধসে পড়া ভবন ও স্থাপনার ভিতর থেকে আর কাউকে জীবিত পাওয়ার আশা করা হচ্ছে না। এসব ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন কেবল লাশের পচা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। অবশ্য গতকালও বেশ কিছু মানুষকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। তবে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএন।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে উদ্ধারকারীরা কাজ করছেন। বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে মৃতদেহ। গতকাল দুপুর পর্যন্ত তুরস্কে উদ্ধার করা মৃতদেহের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারে পৌঁছায়, আর সিরিয়ায় এ সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও বহু লাশ। খবরে বলা হয়, বিধ্বস্ত এলাকায় বিভিন্ন উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হতাহত কিংবা জীবিতদের বের করে আনার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তুরস্কে এ পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে তারা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা জানান, এখনো অনেক জীবিত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন এবং অনেকে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তাদের উদ্ধার করা যাচ্ছে না। বহু মানুষই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া কিংবা আটকে থাকা স্বজনদের উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছেন, কিন্তু ধ্বংসযজ্ঞ এত বেশি এবং বিস্তৃত যে- অনেক জায়গায়ই কিছু করা যাচ্ছে না। এদিকে ভূমিকম্পের পর ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া জীবিতদের উদ্ধারের আশা দ্রুত ক্ষীণ হয়ে আসছে। যদিও গতকাল তুরস্কের হাতায় শহরের বিধ্বস্ত একটি ভবনের নিচ থেকে একসঙ্গে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। উদ্ধারকারীরা বলছেন, প্রতিমুহূর্তে যেভাবে লাশ বের হচ্ছে তাতে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার থেকে দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এদিকে সিরিয়ায় ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক হয়েছে কিন্তু সেভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান, রাশিয়া ও লেবাননের হিজবুল্লাহ ছাড়া বিশ্বের তেমন কোনো দেশ সিরিয়ায় ত্রাণ এবং উদ্ধারকারী দল পাঠায়নি।

নাগরিকরা ক্ষুব্ধ : তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকরা ত্রাণের ধীরগতির সমালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ-সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন। সময় যতই যাচ্ছে, লজিস্টিক ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সুবিধার অভাবে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের বাঁচানোর আশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে। ত্রাণের স্বল্পতা এবং ধীরগতির কারণে জনগণের সমালোচনার খবরাখবর এরই মধ্যে গণমাধ্যমে উঠে আসছে। কাহরামানমারাস এলাকার এক তুর্কি অধিবাসী ইরান-প্রেসের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তার ১৩ ও ১৫ বছর বয়সী দুই সন্তান এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। তারা মহাবিপদে আছেন বলে তিনি হাহাকার ব্যক্ত করেন।

অপর এক তুর্কি নাগরিক বলেন, ‘তিন দিন ধরে অপেক্ষায় আছি, যদি ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হতো তাহলে হয়তো সন্তানকে জীবিত পেতাম।’ আরেকজন নাগরিক উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার ধীর গতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা উচিত। তা না করে সবাই কেবল ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

এদিকে গতকাল রাসুল সরদার নামে এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, এখনো কাহরামানমারাস এলাকার একটি হোটেলে ৬০ জনের বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে আছেন। তিনি বলেন,‘দুঃখজনকভাবে রাত থেকে কাউকে আর জীবিত উদ্ধার করতে দেখা যায়নি। তবে বের করে আনা কিছু লাশ একেবারে ঝলসে গেছে। সেখানে আগুন লেগেছিল, তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি। উদ্ধারকারীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠছে।’ তিনি জানান, লোকবল সংকটের কারণে অনেক এলাকাতেই উদ্ধার অভিযান চলছে ধীরগতিতে। কোথাও কোথাও সাহায্যের আবেদনেও সাড়াও মিলছে না।

সরিয়ে নেওয়া হলো ২১ বাংলাদেশিকে হাসপাতালে দুজন

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর