শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবহেলায় অরক্ষিত ছয় বিমানবন্দর

গরু চরে এয়ারপোর্টের জমিতে, কোথাও হচ্ছে ধান ও মাছের চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবহেলায় অরক্ষিত ছয় বিমানবন্দর

বাগেরহাট খানজাহান আলী এয়ারপোর্টে চরছে গরু, পাবনায় অরক্ষিত বিমানবন্দর (ডানে ওপরে) -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের ছয়টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর অরক্ষিত অবস্থায় অব্যবহৃত পড়ে আছে। কোনোটিতে ৫০ বছর ধরে কোনো বিমান ওড়ে না। সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে কোনোটির উন্নয়ন কার্যক্রম। খানজাহান আলী বিমানবন্দরে নেই রানওয়ে, টার্মিনাল। ৭০০ একর জমিতে ধান চাষ, মাছের খামার ও গরু চরে। কুমিল্লা বিমানবন্দরের রানওয়েতে ঘাস গজিয়েছে। গরু চরে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরে। অব্যবহৃত থেকে কয়েকটি বিমানবন্দরের নেভিগেশন সরঞ্জাম অকেজো হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব বিমানবন্দর আবার পরিচালনা করা গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ত। অনেক দূরবর্তী এলাকার যোগাযোগ হতো স্বাচ্ছন্দ্যময়। দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ১৫টি বিমানবন্দরের মধ্যে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওঠানামা করে এমন বিমানবন্দর রয়েছে আটটি। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক, পাঁচটি অভ্যন্তরীণ। বাকি ছয়টি বিমানবন্দরই পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত। শুধু তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরটি সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করে তিন বাহিনী। সেটির কোনো বাণিজ্যিক ব্যবহার নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিত্যক্ত অরক্ষিত অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত। দেশ এখন উন্নত-সমৃদ্ধ অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় রেখেই আকাশপথের অসীম সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।

খানজাহান আলী বিমানবন্দর গোচারণভূমি : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজে ২৬ বছরেও গতি আসেনি। হয়নি কোনো রানওয়ে, বিমানবন্দর টার্মিনাল ভবনসহ কোনো অবকাঠামো নির্মাণ। অধিগ্রহণকৃত ৭০০ একর জমিতে হচ্ছে ধান চাষ, মাছের খামার। অবশিষ্ট উঁচু এলাকা স্থানীয় কৃষক ব্যবহার করছে গোচারণভূমি হিসেবে। মোংলা বন্দর, বাগেরহাট ও খুলনার সঙ্গে সড়কপথে ৩৫ কিলোমিটার সমদূরত্বের এ বিমানবন্দর প্রকল্পটি কবে বাস্তবায়ন হবে তা-ও বলতে পারছে না বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে জমি দখলে রাখতে কর্তৃপক্ষ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করেছে।

১৯৯৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার ‘শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টল) বন্দর’ হিসেবে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অধিগ্রহণকৃত জমিতে মাটি ভরাট করে। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে আর কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। আবারও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালের ৫ মার্চ এ বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির চার বছর পর ২০১৫ সালে একনেকে ৫৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এরপর বিমানবন্দরটি সরকার নির্মাণ করবে, না পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) হবে, তা নিয়ে স্থবিরতা দেখা দেয়।

মোংলা বন্দর, মোংলা ইপিজেড, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলায় দেশের একমাত্র এলপি গ্যাস হাব, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ষাটগুম্বজ মসজিদ ও সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন, বাগেরহাট-খুলনার শিল্পাঞ্চলসহ চিংড়িশিল্পের কারণে দেশি-বিদেশি লোকজনের দ্রুত যাতায়াতে বিমানবন্দরটির গুরুত্ব বেড়ে যায়। বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল প্রকল্পটি পিপিপিতে করার। এর মধ্যে দরপত্র আহ্বানও করা হয়েছিল। একজন অংশগ্রহণও করেছিল। তার দেওয়া শর্তাবলি আমরা কার্যকর মনে করিনি। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট কেটে গেলে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ করবে আওয়ামী লীগ সরকার।

বগুড়ায় বিমানবাহিনীর ফ্লাইং স্কুল : বগুড়ায় সম্ভাবনা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক বিমান উড়ছে না ২৭ বছর ধরে। ২০২১ সালের নভেম্বরে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল বাণিজ্যিকভাবে বিমান চালানোর বিষয়টি দেখে যাওয়ার পরও বিমান ওড়ার কোনো খবর নেই।

উত্তরের ১৬ জেলার অর্থনীতির গতি বাড়াতে বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বগুড়া অঞ্চলের বাণিজ্যিক প্রসার দিন দিন বাড়ছে। বগুড়ার ব্যবসায়ীদের ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। দূরত্বের কারণে সময়মতো অনেক কিছুই মেলে না। ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় বিমানবন্দর নির্মাণের প্রথম আলোচনা শুরু হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়ায় বগুড়া স্টল বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। তখন ১১০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি টাকা। প্রকল্পে ছিল ৫ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০০ ফুট প্রস্থ রানওয়ে নির্মাণ, অফিস ভবন নির্মাণ, মূল গ্রাউন্ড নির্মাণ, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়। সে হিসেবে ২০০১ সালের শুরুতে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর কথা। কিন্তু বিমান আর ওড়েনি। ২০০১ সালে অজ্ঞাত কারণে বগুড়ার বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। বিমানবাহিনী সেখানে ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর স্কুল পরিচালনা করে আসছে। পরে সংযুক্ত হয় রাডার স্টেশন হিসেবে।

জানা গেছে, বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ের সঙ্গে আরও ৩ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে নির্মাণ, তেলের রিজার্ভার নির্মাণ, যাত্রী ও মালামাল হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য আরও প্রায় ১০০ একর জমির প্রয়োজন।

এদিকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর বগুড়ায় বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করার বিষয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি দল বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করে। তার পরও বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় বিমানবন্দরটি চালু করার প্রয়োজনীয়তা আছে। বগুড়া যেহেতু একটি বাণিজ্যিক এলাকা, সে হিসেবে বিমানবন্দরটি দ্রুত চালু করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে এ এলাকা আরও এগিয়ে যাবে।

কুমিল্লায় বিমান নামে না ৪৭ বছর : কুমিল্লার ১৫ লাখের বেশি বৈধ প্রবাসী দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠান। বিমানবন্দরের পাশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-ইপিজেড। বিমান যোগাযোগ চালু থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হতেন। বেশি প্রবাসী থাকায় বিমানবন্দর দ্রুত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতো। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লার বিমানবন্দরটিতে বিমান নামছে না ৪৭ বছর ধরে।

১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেউরা-ঢুলিপাড়ার পাশে স্থাপিত হয় কুমিল্লা বিমানবন্দর। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে সেনাবাহিনী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করত। ১৯৬৬ থেকে এ বিমানবন্দর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিমান ওঠানামা করে এ বন্দরে।

সরেজমিন দেখা যায়, ৭৭ একর ভূমির এ বিমানবন্দরের রানওয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে গাড়ি প্রশিক্ষণের কাজে। অধিকাংশ এলাকা ঘাসে ঢাকা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, মাত্র ৩০ কোটি টাকার সংস্কারে বিমানবন্দরটি সচল হতে পারে। বিমানবন্দরটি চালু হলে সংলগ্ন কুমিল্লা ইপিজেডে আরও অনেক বিদেশি বিনিয়োগ আসত, কর্মসংস্থান হতো বিপুলসংখ্যক মানুষের। বিমানবন্দরটি এখন আন্তর্জাতিক রুটের সিগন্যালিংয়ের কাজ করে। প্রতিদিনই ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান এ সিগন্যাল ব্যবহার করে। বেশি চলাচল করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমান এ রুটে চলে। এ ছাড়া রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের বিমান। এ বিমানবন্দর প্রতি মাসে সিগন্যালিং বাবদ আয় করছে ৩০-৪০ লাখ টাকা। বিমানবন্দরটি চালু করতে জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা নেই। প্রয়োজন রানওয়ে কার্পেটিং, ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের জনবল। বর্তমানে এ বন্দরে ২০ লোকবল রয়েছে।

কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরটির বেশির ভাগ যন্ত্র সচল। ২০-২৫ কোটি টাকা খরচ করলে এ বন্দরটিতে বিমান ওঠানামার কাজ শুরু করা যাবে।

ঈশ্বরদীর নেভিগেশন সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যাচ্ছে : ব্রিটিশ শাসনামলে পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটি ১৯৮৭ সালে লোকসানসহ নানান অজুহাতে প্রথম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। কিছুদিন বিমান চলাচলের পর লোকসানের কথা বলে আবার ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর ঈশ্বরদী বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। তখন ছয় মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে আবারও বন্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরটি। তবে মাঝেমধ্যে হেলিকপ্টার ও বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ওঠানামা করলেও বাণিজ্যিক বিমান বন্ধ রয়েছে।

ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের জন্য ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪৫ দশমিক ৯১ একর জমি এখন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে। এ জমিতে টার্মিনাল বিল্ডিং, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন, নেভিগেশন ও সংযোগ সরঞ্জাম, অফিসারদের আবাসিক এলাকা রয়েছে। দীর্ঘদিন বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় অকেজো হয়ে পড়ছে বিমানবন্দরের নেভিগেশন ও যোগাযোগ সরঞ্জাম।

স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরকেন্দ্রিক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ বিমানবন্দরটি দ্রুত চালু করা উচিত। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে এ অঞ্চলে। বিমানবন্দরটি চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সরকার ও এ অঞ্চলের মানুষ।

শমসেরনগর বিমানবন্দর পরিত্যক্ত ৫০ বছর : পরিত্যক্ত পড়ে আছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দরটি। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও চালু হয়নি বিমানবন্দরটি। ২০১৬ সালে তৎকালীন বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিমানবন্দরটি ফের চালুর ঘোষণা দেন। তখন অনেকেই নতুন করে বিমানবন্দরের আশপাশে বিল্ডিং নির্মাণ করেছিলেন। জায়গার দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। সেই ঘোষণার ছয় বছর পার হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, বার্মা (মিয়ানমার), মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় অভিযান চালানোর জন্য ব্রিটিশ সরকার শমসেরনগর চা বাগানের ৬২২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে এ বিমানবন্দর গড়ে তোলে। বিমানবন্দরটিতে ৬ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রশস্ত রানওয়ে রয়েছে। প্রশস্ত রানওয়ে, বিশাল পরিসর, উন্নত যাতায়াতব্যবস্থা ও অবকাঠামো সুবিধা থাকা এ বিমানবন্দরে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত বিমান ওঠানামা করত। পরে এতে যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে শমসেরনগর বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ইউনিট খোলা হয়। তখন থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে। বর্তমানে বিমানবন্দরের পতিত ভূমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কৃষি খামার। সংস্কার করা হয়েছে রানওয়ের কিছু অংশ। ২০১২ সালে বিএএফ শাহীন কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়।

এ বিষয়ে শমসেরনগর বিমানবন্দরের ইয়ার্ড কমোডর আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরটি চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। ২০১৬ সালে বিমানবন্দরটি ফের চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।’

৪২ বছর পরিত্যক্ত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর : ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর ৪২ বছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। এ বন্দরের ১১১ একর জমি পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে। বন্দরের রানওয়ে ভরে গেছে আগাছায়। স্থানীয়রা ফসল শুকানো আর মাড়াই করার কাজে ব্যবহার করছেন রানওয়েটি।

বিমানবন্দরটি ঠাকুরগাঁও শহর থেকে মাত্র প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ মহাসড়কের শিবগঞ্জ মাদারগঞ্জে অবস্থিত। ১৯৪০ সালে নির্মিত হয় ৫৫০ একর জমির ওপর। পাকিস্তান সরকার বিমানবন্দরের জমি আর্মি স্টেট হিসেবে ঘোষণা দিলে ১১১ একর জমি বুঝে পায় সিভিল অ্যাভিয়েশন। এ বিমানবন্দর চালু হওয়া নিয়ে আজও স্বপ্ন দেখেন ঠাকুরগাঁওবাসী।

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করেছিল এ বিমানবন্দরটি। স্বাধীনতার পর বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বিমানবন্দরটি ১৯৭৭ সালে সংস্কার করা হয়। তখন কিছু সময় বাণিজ্যিক ফ্লাইটও পরিচালিত হয়। কিন্তু ১৯৮০ সালে অজ্ঞাত কারণে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে পরিত্যক্ত এ বিমানবন্দর।

পরিচর্যার অভাবে দিন দিন বিমানবন্দর ভবনের প্লাস্টার খুলে গেছে। জানালার কাচগুলো ভেঙে পড়েছে। রানওয়ের অধিকাংশ জায়গার পিচ ঢালাই উঠে গেছে। যতেœর অভাবে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। এ বিমানবন্দরটি চালু হলে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষকে ঘুরপথে আর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যেতে হবে না। কিছুদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এটি চালু করার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।

[প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন বাগেরহাট প্রতিনিধি শেখ আহসানুল করিম, বগুড়া প্রতিনিধি আবদুর রহমান টুলু, কুমিল্লা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মোল্লা, পাবনা প্রতিনিধি সৈকত আফরোজ আসাদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সৈয়দ বয়তুল আলী ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি মো. আবদুল লতিফ লিটু]

সর্বশেষ খবর