বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ণ সমর্থন ভারতের

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক নিয়ে দিনভর নানা বৈঠক সচিব বিনয় মোহনের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ণ সমর্থন ভারতের

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বের প্রতি ভারতের úূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। ঢাকায় সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। এ সাক্ষাৎ ছাড়াও গতকাল দিনভর বৈঠক করেছেন প্রতিবেশী দেশটির পররাষ্ট্র সচিব। এসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রায় সব দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। সফর শেষে আজ সকালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব গতকাল দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দুই দেশের ফরেন অফিস কনসালটেশনে অংশ নেন। পরে তিনি যান গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, সাক্ষাৎকালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আপনার এবং আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ উন্নয়নযাত্রায় ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় বিনয় কোয়াত্রা শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি-২০) শীর্ষ সম্মেলনের ১৮তম আসরে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বন্ধনকে অত্যন্ত দৃঢ় বলে বর্ণনা করে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে, যা ইতোমধ্যেই কৌশলগত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এ বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উভয় দেশই কাজ করতে পারে। সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি)-এর শর্তাবলি সহজ করার চেষ্টা করছেন যাতে বাংলাদেশ সহজেই ঋণ নিতে এবং তা পরিশোধ করতে পারে। দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করেই পরিচালনা করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, দুপুরে অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, এফওসিতে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে ভারতের কাছে যেসব অনিষ্পন্ন ইস্যু রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে তাদের সহায়তা কামনা করি। এ লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করি। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিস্তাসহ সব আন্তসীমান্তবর্তী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনে দেশটির নিবিড় সহযোগিতা প্রত্যাশা করে ঢাকা। সেই সঙ্গে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সই করা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ভারতকে বলেছি। তিনি বলেছেন, সীমান্ত হত্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এটিকে শূন্যে নামিয়ে আনতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ বিষয়ে ভারত সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন জানান, আদানির বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে আলাদা করে আলাপ হয়নি। তবে বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আলাপ হয়েছে। তারা নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে সহযোগিতা করবেন। তবে তারা বলেছেন, আমাদের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। আমরা এটা লাইন মিনিস্ট্রির সঙ্গে আলাপ করব। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ট্যারিফ বাধা দূর করতে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া সেপা চুক্তি দ্রুত করতে আলোচনা হয়েছে। মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বিদ্যমান সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সফর নিয়ে গতকাল ভারতীয় হাইকমিশনের বিবৃতিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্র সচিব শ্রী বিনয় কোয়াত্রা সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি ভারতের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি, বাংলাদেশকে ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট পলিসি’র একটি অপরিহার্য অঙ্গ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র মূল অংশীদার হিসেবে তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে শুভেচ্ছা জানান। ফরেন অফিস কনসালটেশন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব কোয়াত্রা ও পররাষ্ট্র সচিব সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এ সম্পর্কের সব দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। উভয় পক্ষই ভারত সরকারের অর্থায়নে রেয়াতি লাইন অব ক্রেডিট, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সংযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং মানুষে-মানুষে বন্ধনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন। তাঁরা যৌথ স্বার্থের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সহযোগিতা ও পরামর্শ বাড়াতেও সম্মত হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে, ভারতের জি-২০’র প্রেসিডেন্সি চলাকালীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যাপারে ভারত ভীষণভাবে উন্মুখ। উভয় পক্ষই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদের জন্য আসন্ন প্রার্থিতার ব্যাপারে পারস্পরিক সমর্থন প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। হাইকমিশন আরও জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে গত দশকে, বাংলাদেশ ও ভারতের নেতৃস্থানীয় পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছে। পররাষ্ট্র সচিবের সফর দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে সাহায্য করেছে, সময়ের সঙ্গে পরীক্ষিত তাদের এ সম্পর্ককে পুনরায় বলবৎ করেছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করার সুযোগ দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর