শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কুমিল্লার ৭০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর মুখে বাংলা ভাষা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লার প্রায় ৭০০ বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলা ভাষায় কথা বলেন। গলায় বাংলায় সুর তুলে গান করেন। খাচ্ছেন বাঙালি খাবার। কুমিল্লার রসমালাই ও খাদি পোশাকের প্রেমেও মজেছেন তারা। তাদের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলা ভাষা। সঙ্গে কুমিল্লাসহ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। কুমিল্লার চারটি মেডিকেল কলেজে পড়েন এই শিক্ষার্থীরা। এখানে পড়ছেন ভারতের মেঘালয়, মণিপুর, কাশ্মীর, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা পড়ছেন। এর আগে এখান থেকে পড়ে গেছেন জার্মানি, আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার শিক্ষার্থীরা।

সূত্র মতে, কুমিল্লা জেলায় পাঁচটি মেডিকেল কলেজের মধ্যে চারটিতেই বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৫ জন, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে ২৮৯, ময়নামতি মেডিকেল কলেজে ২৫০ ও সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজে রয়েছেন শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী। এবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কুমিল্লার বিভিন্ন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবেন এই শিক্ষার্থীরা। বাংলায় গেয়ে উঠবেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’ কুমিল্লা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ভারতের মণিপুরের জে’র ভাষা মণিপুরী। কুমিল্লায় এসে তিনি বাংলা শিখেছেন। এখানকার খাবার তার প্রিয়। তিনি ভালো গান গাইতে পারেন। এই প্রতিবেদককে শুনিয়ে দিলেন- ‘কেন মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে...।’ কেরালার ঐশ্বরিয়া বলেন, ‘বাংলা ভাষা শিখতে প্রথমে সমস্যা হয়েছিল। পরে শিক্ষক ও বন্ধুদের সহযোগিতায় শিখেছি।’ আদিত্বা বলেন, ‘এখানে পাঁচ বছর ছিলাম। এখানকার ভাষা মধুর। আমাদের পড়া শেষ। চলে যেতে হবে। তবে এখানকার বন্ধুদের ও খাবার খুব মিস করব।’ কলকাতার দিতি ও রিফাত বলেন, ‘এখানে আমাদের ভাষার কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ, আমাদের ভাষাও বাংলা। কলকাতায় সবাই প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন। তবে এখানে ভাষার অনেক রূপ পেয়েছি। শুনতেও ভালো লাগে। কেউ কুমিল্লা, কেউ নোয়াখালী, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেন। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাই আমাদের অনেক প্রিয়।’

ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের সিনিয়র ফরেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মো. আতাউল মাসুদ রাজীব বলেন, ‘এখানে শিক্ষার্থী বেশি আসে ভারত থেকে। কারণ, এখানে পড়ার খরচ কম। ভারত ও নেপাল থেকে আসাদের বাংলা বলায় তেমন সমস্যা হয় না। একটু সমস্যা হয় ভারতের তামিলনাড়ু– এলাকার শিক্ষার্থীদের।’

ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মো. শাহ সেলিম বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করাই। এতে তারা এখানের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশছে। তাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে মধুর বাংলা ভাষা।’ চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম বলেন, ‘কুমিল্লায় সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। তাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষার পরিধি বাড়ছে।’

কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, ‘কুমিল্লার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ছে। তাদের মাধ্যমে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। তা অবশ্যই ভালো লাগার।’ ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম। তারা কুমিল্লার সন্তান। এদিকে কুমিল্লার মেডিকেল কলেজগুলোর বিদেশি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ভাষার বিশ্বায়ন হচ্ছে। যা আমাদের জন্য গৌরবের।’

সর্বশেষ খবর