নানা বিতর্কের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ জিহাদি বধূ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলই বহাল রেখেছেন ব্রিটেনের স্পেশাল ইমিগ্রেশন অ্যাপিলস কমিশন। বিচারপতি জে এ রায় ঘোষণা করেন ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার ব্রিটেন সময় সকাল ১০টায়। এ রায়ের ফলে শামীমা বেগমের ব্রিটেনে ফেরার আর কোনো সম্ভাবনাই রইল না। এ রায়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিস্মিত হয়েছে। স্কাই নিউজ বলেছে, এভাবে সিটিজেন বাতিল বহাল রাখা আইনত সঠিক নয়। এদিকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম মঙ্গলবার থেকেই ধারণা করছিল, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বহাল রাখা হবে। রায়ের আগে বুধবার সকালে ব্রিটিশ মন্ত্রী জনি মার্সার বলেন, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব থাকবে কি থাকবে না এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেবেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত পূর্বের হোম সেক্রেটারির ছিল। তবে অবশ্যই দেশের জন্য তিনি বড় ধরনের হুমকি। এই মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবলিক ডোমেইনে নেই। তবে এই অভিজ্ঞ মন্ত্রী বলেন, আদালত এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে। শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পাঁচ দিনের ট্রায়ালে মূলত প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ১৫ বছরের শামীমা বেগমকে পাচার করা হয়েছিল কি না সে বিষয়ে। সম্প্রতি বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, শামীমা বেগমকে কানাডার এক গোয়েন্দা রিক্রুট করে তাকে সিরিয়ায় পাচার করে। পরে তাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। সেই গোয়েন্দা মূলত কানাডার সিটিজেনশিপ পাবে এমন শর্তে কানাডার কাছে তথ্য প্রদান করত। একই সঙ্গে সে গোপনে আইএসের রিক্রুটার হিসেবেও কাজ করত। ২০২০ সালে স্পেশাল ইমিগ্রেশন অ্যাপিলস কমিশন বলে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কারণ শামীমা বেগমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আছে। তবে বাংলাদেশ খুব শক্তভাবে এর প্রতিবাদ করে। শামীমা বেগমের বাবা ও মা দুজনই বাংলাদেশি নাগরিক হলেও শামীমা বেগম কখনোই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেননি। এমনকি শামীমা কখনোই কোনো ধরনের পাসপোর্ট তৈরি করেননি, কখনোই বাংলাদেশ ভ্রমণও করেননি। ২০১৫ সালে শামীমা বেগম যখন সিরিয়ায় গমন করেন তখন তিনি তার বোনের পাসপোর্ট নিয়ে ফ্লাইটে উঠে বলে পরে ব্রিটিশ পুলিশ জানায়। বাংলাদেশ সরকার বলে, শামীমা বেগমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ তাকে গ্রহণ করবে না। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড। ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শামীমা বেগম তার দুজন বান্ধবীর সঙ্গে স্কুল পালিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেন। সেখানে তার সঙ্গে বিয়ে হয় ডেনমার্কের নাগরিক জিহাদি রেজভিকের। শামীমা বেগম বিশ্ব গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত জিহাদি বধূ হিসেবে পরিচিতি পান। ২০১৯ সালে সানডে টাইমস সাংবাদিক শামীমা বেগমকে খুঁজে পান সিরিয়ার একটি ক্যাম্পে। শামীমা বেগম তত দিনে তিন সন্তানের মা হলেও তিন সন্তানই জন্মের পর নানা অসুখে মারা যায়। এ সময় শামীমা বেগম ব্রিটেনে ফিরতে চান এমন আগ্রহের কথা জানালেও সানডে টাইমসকে তিনি বলেন, তিনি যা করেছেন সেটার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। এর পরই আবারও বিতর্ক শুরু হয় শামীমা বেগমকে নিয়ে। ২০১৯ সালেই তুমুল বিতর্কের মধ্যে শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।
এরপর ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। পরে শামীমা বেগম ব্রিটেনকে ভালোবাসেন, তিনি যা করেছেন তার জন্য অনুতপ্ত, ব্রিটেনে ফিরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে চান, সরকারকে সহায়তা করতে চান বলে জানান। তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শামীমার আইনজীবী ও পরিবার স্পেশাল ইমিগ্রেশন অ্যাপিলস কমিশনে অ্যাপিল করে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে পাঁচটি তারিখে শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল বহালের রায় এলো। তবে সরকার এখনো মনে করছে শামীমা বেগম জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।