সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বারান্দা ছাড়িয়ে রোগী টয়লেটের পাশেও

রাহাত খান, বরিশাল

বারান্দা ছাড়িয়ে রোগী টয়লেটের পাশেও

স্থান সংকটে ত্রাহি দশা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অধিক চাপে রোগীর শয্যা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। মেঝেতে, করিডরে, বারান্দায় এমনকি টয়লেটের পাশে শুয়েও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এতে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে রোগীদের। ধারণ ক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ রোগী থাকায় সব রোগীকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি সেবিকাদের। এদিকে স্থান সংকটের কথা স্বীকার করে পুরনো হাসপাতাল ভবন ভেঙে একই আদলে ২৫ তলা ভবন নির্মাণের কথা জানিয়েছে হাসপাতালের পরিচালক।

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৬০ শয্যার বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের পাঁচতলা ভবনটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে দৈর্ঘ্য ৯৬০  ফিট। আয়তন সাড়ে ৪ লাখ স্কয়ারফিট। ১৯৭৩ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সব শেষ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। শয্যা তিনগুণ হলেও অবকাঠামো বাড়েনি ৭ দশকেও। ফলে ধারণ ক্ষমতার চার থেকে পাঁচ গুণ রোগীতে ঠাসাঠাসি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড। শয্যা, মেঝে, বারান্দা, করিডর ছড়িয়ে টয়লেট বাথরুমের পাশে নোংরা পরিবেশে শুয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন লাইলী বেগম জানান, তিন দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের রোগী। শয্যা খালী না থাকায় তাকে মেঝেতে বিছানা দেওয়া হয়। তিন দিনেও শয্যা পাননি তারা। মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে সমস্যা হচ্ছে তাদের। হাওয়া বেগম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, নবজাতককে মেঝেতে রাখায় ধুলোবালি, নোংরা এবং রোদে সমস্যা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীর। সব রোগীর শয্যা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। আসলাম খান নামে এক রোগীর স্বজন জানান, ‘বেড না পাওয়ায় ফ্লোরে দিয়েছে। সবাই কাশি, থু-থু ফেলে। বাচ্চার গায়ে ধুলো ময়লা ওঠে। এতে সমস্যা হচ্ছে।’ আরিফুর রহমান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘প্রত্যেক রোগীর জন্য একটা করে বেড দরকার। ফ্লোরে রোগীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।’ মহিলা মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ সেবিকা আসমা আক্তার বলেন, ‘৪৮টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকে ২৫০-এর বেশি। অতিরিক্ত চাপ থাকলে ফ্লোরে বারান্দায় রোগী থাকবেই। ফ্লোরে রোগী থাকায় সেবা দিতে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।’ সিনিয়র স্টাফ নার্স মনি মিত্র বলেন, ‘৪৫ শয্যার বিপরীতে গড়ে ৩০০ রোগীও ভর্তি থাকে। জায়গা নেই রোগী রাখব কোথায়? জায়গা না বাড়ালে এই সমস্যা সমাধান হবে না।’ প্রসূতি ও গাইনি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স জ্যোৎ¯œা আক্তার বলেন, ‘৪০টি শয্যার বিপরীতে ১৬০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। জায়গা না পেলে ফ্লোরে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ রোগীর স্বজনদের আরও মন্তব্য, ‘হাসপাতালের মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন, সার্জারি, অর্থপেডিক্স, গাইনি ও প্রসূতি, শিশু বিভাগ এবং নবজাতক ইউনিটে হাটবাজার কিংবা লঞ্চের ডেকের চিত্র। একটি আদর্শ হাসপাতালে এমন চিত্র কল্পনাও করা যায় না।’ এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জায়গা সংকটের কারণে টয়লেটের পাশেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ-আক্ষেপ আছে। এতে সেবা দিতেও সমস্যা হয়। সমস্যা সমাধানে পুরনো আদল ঠিক রেখে পুরনো ভবনের স্থলে ২৫তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একসঙ্গে ২০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে আগামী ৫০ বছরেও আর হাসপাতালে স্থান সংকট হবে না।

সর্বশেষ খবর