মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আরাভকে ফেরাতে রেড নোটিস ইন্টারপোলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরাভকে ফেরাতে রেড নোটিস ইন্টারপোলের

পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সেই চিঠির উত্তর এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আরাভ ওরফে রবিউলের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়েছে।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আরাভকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পরে এ বিষয়ে তথ্য পেলে বিস্তারিত জানানো হবে।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার এনায়েতবাজার পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান চালু করে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ    খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ওই চিঠি ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তার পলায়নের ঘটনায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত আছে কি না তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে। সূত্র জানান, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খান হত্যার আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন ‘রবিউল ইসলাম’ নামেই। সেখানে ঠিকানা হিসেবে বাগেরহাট জেলা উল্লেখ করেছিলেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যানুযায়ী, জন্ম ১৯৮৭ সালের ১৯ আগস্ট। পড়ালেখা করেছেন মাধ্যমিক পর্যন্ত, জন্মস্থান বাগেরহাট এবং রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। রবিউলের বাবা মতিউর রহমান, মা লাখি ও স্ত্রীর নাম রুমা। তার বয়স এখন ৩৫ বছর সাত মাস। সেখানে আরাভ খান স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করেছেন বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদলিয়া ইউনিয়নের আড়ুয়াডিহি গ্রাম। তবে জানা গেছে, ঠিকানাটি তার নানাবাড়ির এলাকা। সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আরাভ খানের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, জুয়ার টাকা জোগাড় করতে রবিউল ওরফে আরাভ গ্রামের মানুষের হাঁস-মুরগি চুরি করতেন। এমনকি তার বাবার মেরে আনা মাছ চুরি করেও বাজারে বিক্রি করে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে খেলতেন জুয়া। একসময় তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন গ্রামবাসী।

আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের নামে রেড নোটিসটি পেতে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৬২ জন বাংলাদেশির নামে রেড নোটিস জারি করা আছে। গত রাত ৮টা পর্যন্ত আরাভ কিংবা রবিউল ইসলাম নামে কোনো রেড নোটিস পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সূত্র বলছেন, রেড নোটিস জারি হবে রবিউল ইসলাম নামে। রেড নোটিস ইন্টারপোল জারি করেছে, কিন্তু তাদের ওয়েবসাইটে একটু সময় লাগে। কখনো দুই ঘণ্টা আবার কখনো এক দিনও লাগে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রহমত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে ঢাকার বনানীর একটি বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে মামুনকে ফাঁদে ফেলে বনানীর ওই বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। তাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে বেঁধে, স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে পেটানো হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে মামুন মারা যান। পরে গাজীপুরে তার লাশ পুড়িয়ে গুমের চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। এ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ে রবিউলের ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে একটি গহনার দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলমসহ দেশের বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকা। এর পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে।

সর্বশেষ খবর