বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২৩-২৪

বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও মুদ্রাবাজার অগ্রাধিকার

মানিক মুনতাসির

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে এ সংকটকে সুযোগের আদলে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা-বিনিয়োগকে চাঙা করছে পৃথিবীর অনেক দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতিও স্মরণকালের সংকটকাল অতিক্রম করছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), যার প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে ছাড়ও করেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রণয়ন শুরু করেছে সরকার। এবারের বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আসছে সময়টাতে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো। কেননা বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর দেশ। ফলে ডলারে চাহিদা অনেক বেশি। সে অনুপাতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। যদিও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরেই। এবারের বাজেটে এ-সংক্রান্ত একটি কৌশলপত্র থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র। এদিকে আইএমএফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির কয়েকটি ঝুঁকি ও সমস্যার কথা উঠে এসেছে। এ ছাড়া দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান বাধাকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে এর মধ্যে তিনটি বাধা হলো উচ্চ শুল্ক-অশুল্ক, অবকাঠামোসহ উপযুক্ত পরিবেশ না থাকা ও আস্থার সংকট। ফলে অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন বাড়লেও শিল্প উৎপাদনে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এমনকি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে। এসব বিষয়েও আসছে বাজেটে নানা রকম নির্দেশনা তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। আইএমএফের মতো বিশ্লেষকরাও মনে করেন, কোনো দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে একটি সুষ্ঠু ও উপযুক্ত পরিবেশ এর পূর্বশর্ত, যা বৈদেশিক বাণিজ্যকে প্রসারিত করে। একই সঙ্গে এফডিআই আকর্ষণ করতে সাহায্য করে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ পরিবেশ উপযুক্ত নয়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া অর্থনৈতিক পদেক্ষপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ পদক্ষেপই তুলনামূলক কম উপযুক্ত। একইভাবে এখানে উচ্চ শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে, যেগুলো হ্রাস করা খুবই জরুরি।

এমনকি এক দশক ধরে অবকাঠামো খাতে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও উপযুক্ত অবকাঠামো এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক ও পুঁজির অনিশ্চয়তা। ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে ভোগেন। এসব বিষয়েও বাজেটে এক ধরনের নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে অব্যাহতভাবে। ফলে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ, যার অন্যতম কারণ হলো কাক্সিক্ষত হারে বিদেশি বিনিয়োগ না আসা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবেদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ যতটা উন্নত হবে সেখানে তত বেশি বিনিয়োগ আসবে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা সবার আগে চান পুঁজির নিশ্চয়তা এবং রিটার্ন, যাকে বলা হয় লাভ। এর কোনোটারই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এলেও পরে ফিরে চলে যান।’

এ ছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন ক্ষমতার দুর্বলতা, কিছু প্রস্তাবিত সংস্কারের রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জন্য অস্থায়ীভাবে পরিকল্পনা করা জাতীয় নির্বাচনের কারণে রাজনৈতিক ঝুঁকিসহ রয়েছে অন্যান্য ঝুঁকি। এ ঝুঁকিগুলো ঋণ কর্মসূচির অধীনে অব্যাহত নিযুক্তি এবং শর্তাবলি দ্বারা প্রশমিত হবে। পাশাপাশি ঋণের অর্থ ব্যয়ের সমালোচনা অন্যতম কারণগুলোর মতো আপত্তিকর আর্থিক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এসব মতামত, সুপারিশ ও নির্দেশনা আমলে নিয়ে একটা সময় উপযোগী বাজেট দিতে চায় সরকার, যাতে সাধারণ মানুষকে এ অস্থির সময়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া যায়। এজন্য জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং ৫ কোটি মানুষকে কম মূল্যে খাদ্য সরবরাহের কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে আসছে বাজেটে। এদিকে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে সরকার সম্পদ অর্জন করবে এর একটা রোডম্যাপ থাকতে হবে। এ সম্পদ আর আয় সরকার জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে পারবে। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার এখন খরচের কৃচ্ছ্রসাধন করে যাচ্ছে। এজন্য খরচ কমাতে হচ্ছে। এ অবস্থা তো সব সময় থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর