শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

খোলা আকাশের নিচে ২০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ

তাঁতশিল্প আধুনিকায়নে উদ্যোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

খোলা আকাশের নিচে ২০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ

তাঁতশিল্পকে আধুনিকায়নের জন্য বর্তমান সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে দেশের অন্যতম প্রধান তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তাঁতশিল্পকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রসেসিং, প্রিন্টিং ও ডায়িংয়ের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। আধুনিক এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং স্থাপনের কাজ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।

চুক্তি অনুযায়ী কাজের সময় শেষ হয়েছে গত বছরের জুন মাসে। এরপর আরও প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৭০ ভাগ কাজের প্রায় ২০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ খোলা আকাশের নিচে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ের কবলে পড়ে মূল্যবান এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।

এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, ৩২ কোটি টাকার যন্ত্র দিনের পর দিন এভাবে পড়ে আছে অথচ দেখার কেউ নেই। লোক নেই, অবকাঠামো নেই। তাহলে তড়িঘড়ি করে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি কেনার দরকার কী ছিল? যন্ত্র চলুক বা না চলুক, কোনো অসুবিধা নেই। এই ৩৪ কোটি টাকার হিসাব কে দেবে? প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যদি না থাকে তাহলে কার স্বার্থে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি কেনা হলো- এসব বিষয় তদন্ত করে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কুমারখালী তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা যায়, খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা। সে লক্ষ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৬টি যন্ত্রপাতি কুমারখালী তাঁত বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করে। শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩০ শতাংশ যন্ত্রপাতি স্থাপন করার পর অবশিষ্ট যন্ত্রগুলো অবকাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় না হওয়া, উপযুক্ত অবকাঠামো না থাকা এবং পুরাতন যন্ত্রপাতি অপসারণে বিলম্ব হওয়ার কারণে সব যন্ত্রপাতি এখনো স্থাপন করতে পারেনি। যন্ত্রপাতিগুলো বছরের পর বছর খোলা জায়গায় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। এগুলোর কোনো কোনোটির দাম কোটি টাকা। প্রায় দেড় বছর ধরে এগুলো পড়ে আছে। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ের কবলে পড়ে মূল্যবান এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। কুমারখালী উপজেলা তাঁত উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শওকত আলী বলেন, সরকার তাঁতশিল্পকে আধুনিকায়ন ও তাঁতিদের ভাগ্য বদলের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের অবহেলায় মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি খোলা আকাশের নিচে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, যা নষ্টের উপক্রম।

এ বিষয়ে কুমারখালী তাঁত বোর্ডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, জায়গার অভাবে যন্ত্রপাতিগুলো বাইরে রাখা হয়েছে। পুরাতন যন্ত্রাংশ গত ডিসেম্বরে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আশা করছি রোজার ঈদের পর কাজ শুরু হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছ থেকে কাজটি সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কে সোবহান ট্রেডার্স। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোবহান ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সামিরুল আক্তার বলেন, তাঁত বোর্ডের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে এতদিন যন্ত্রপাতিগুলো স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যে সমস্যাগুলো ছিল তা দূর করে আশা করছি, রোজার ঈদের পর পরই পুরো যন্ত্রাংশ স্থাপন করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর