রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

উপকমিটিতে নাম লেখাতে তদবির

♦ বিতর্কিতরাও ঢুকতে চান ♦ অনুসারীদের নিয়ে শোডাউনে পদপ্রত্যাশীরা

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে নাম লেখাতে চলছে জোর তদবির। দলের বিষয়ভিত্তিক ১৯টি পদের উপকমিটিতে আসতে চান বিতর্কিতরাও। তারা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বাসায়, অফিসে, দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা বলছেন। কেউ কেউ প্রভাবশালী নেতাদের দিয়েও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সুপারিশ করাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিয়মিত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনুসারীদের নিয়ে শোডাউন করছেন। জানা গেছে, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর সহসম্পাদক পদটি তুলে দেওয়া হয়। সে সময় ‘ঢাউস’ আকারে সহসম্পাদক করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগের মধ্যে। সে কারণে বিষয় ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়। প্রত্যেক সম্পাদকীয় পদগুলোতে ‘সদস্য’ করা হয়। এরপর থেকে উপকমিটিতে সদস্য করা হয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্পাদক পদ রয়েছে। তার মধ্যে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদটি এখনো শূন্য রয়েছে। ১৮টি সম্পাদকীয় পদের উপকমিটি গঠন করতে হবে। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। ক্ষমতাসীন দলের উপকমিটিগুলো কত সদস্যবিশিষ্ট হবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক বিগত সময়ে এগুলো ৫০ সদস্যবিশিষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই সেই পরামর্শ মানেননি। বিগত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত কমিটিতে ১০১ থেকে ১৫০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলেন। করোনাকালীন সময়ে কিছু কিছু উপকমিটিতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর যথেষ্ট যুক্তিও ছিল বলেও দাবি তাদের। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপকমিটির জন্য কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। গত কমিটির কিছু সদস্য এবারও থাকবে। নতুন কিছু মুখ যুক্ত হবে। সমস্যা হচ্ছে, দলের সিনিয়র অনেক নেতার তদবির থাকে, যা ফেলার মতো নয়। কারণ, সিনিয়র নেতার সুপারিশ না রাখলে মন খারাপ হবে। এখন এত বেশি সুপারিশ আসছে, সব রাখতে গেলে সেই কমিটির সদস্য সংখ্যা শতাধিক হবে। আবার হাইব্রিড, বিতর্কিত ব্যক্তিও কমিটিতে ঢুকে যাবে। গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে আসেন ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলার উপকমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতা। তিনি বিগত দিনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বিগত সময়ে একটি উপকমিটির সঙ্গে কয়েকদিন কাজও করেছেন। কিন্তু তিনি সদস্য ছিলেন না। এবার তাকে সদস্য করতে দলের সিনিয়র নেতাদেরও সুপারিশ আছে বলে জানা গেছে। আবার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সংখ্য রয়েছে, প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা, সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তুলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতরে তদবির করে বেড়ান এমন ‘সুন্দরী’রাও আসতে চান উপকমিটিতে। পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে উপকমিটিতে ঢুকতে পারলে এলাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার পরিচয় দেওয়া যায়। অনেকেই জেলার সিনিয়র নেতাদের টপকিয়ে তারা সামনের চেয়ারে বসে থাকেন। কেউ কেউ এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে প্রচার করেন। এলাকায় গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বালু মহল, জল মহল, হাটঘাট ইজারাসহ নানা বিষয়ে নাক গলান। সে কারণে তারা উপকমিটিতে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা বলছেন, উপকমিটি গঠনে তারা বেশ সতর্ক। কারণ বিগত সময়ে রিজেন্ট হাসপাতালের শাহেদ, নানা নামে পরিচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ অনেকের কারণে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। এবার কমিটি করার ক্ষেত্রে বিষয়টির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আমরা সিনিয়র নেতাদের সুপারিশ রাখব। তবে কে কার জন্য সুপারিশ করছেন, সেটা চিরকুট আকারে জমা দেওয়ার সময় লিখে দেব। চোখ-কান খোলা রেখেই কমিটি গঠন করা হবে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় কমিটির বড় অংশের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রমবিষয়ক পদটি ছাড়া বাকি ১৮টি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের নামও ঘোষণা করেন তিনি। সেই বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপকমিটি করার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক নেতার সঙ্গে একজন চেয়ারম্যান, কো- চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব থাকেন। এর মধ্যে উপকমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আছে উপকমিটির সদস্য বাছাই। যারা সদস্যপদে প্রার্থী রয়েছেন, তাদের জীবন-বৃত্তান্ত যাচাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে বেশ কয়েকবার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তাগিদ দিয়েছেন। ঈদের আগেই উপকমিটি গঠন করা হতে পারে। কমিটি গঠন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপকমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক উপকমিটিতে আগে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের রাখা হবে। যারা নিষ্ক্রিয় তারা এমনিতেও থাকবেন না। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা চেহারা দেখানোর জন্য থাকেন তারা নয়, যারা কমিটমেন্ট নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের নিয়ে কমিটি করা হবে। তিনি বলেন, বিতর্কিত কেউ যাতে ঢুকে পড়তে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কমিটি নিয়ে বিতর্ক নেই। তারপরও আমরা সতর্ক রয়েছি যাতে বিতর্কিতরা কমিটিতে আসতে না পারেন। তাই ছাত্রলীগের ক্লিন ইমেজের নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যতগুলো উপকমিটি রয়েছে, তার মধ্যে এ কমিটি অন্যগুলো থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিটি গঠনের কাজ আমি শেষের দিকে নিয়ে এসেছি। কমিটির চেয়ারম্যান এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা নিয়ে খুব শিগগিরই উপকমিটি ঘোষণা করতে পারব বলে আশা করছি। দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করব। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের দিয়েই উপকমিটি গঠন করা হবে। বিগত সময়ে যারা ভালো কাজ করেছে, তারা থাকবে।’

সর্বশেষ খবর