মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্ল্যাকমেল করতেই ডাকা হয় স্থপতি ইমতিয়াজকে

তিনজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়াকে (৪৭) হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মুন্না, মেঘ আনোয়ার ও অভি। তাদের দেওয়া তথ্যে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যার সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, হত্যায় জড়িত আলিফ ও আরাফাত ওরফে ফয়সাল নামে আরও দুজন পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, আসামিরা সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার। তারা গ্রিন্ডর নামের গে চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করেন। এরপর বাসায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় ব্ল্যাকমেল করেন। পরে টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা। স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার সঙ্গে আসামি আলিফের সম্পর্ক তৈরি হয় চ্যাটিং অ্যাপে। গত ৭ মার্চ দুপুরে আলিফকে কল করেন ইমতিয়াজ। আলিফ তখন কলাবাগানে আরাফাতের বাসায় যেতে বলেন ইমতিয়াজকে। বাসায় ইমতিয়াজের সঙ্গে আলিফের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার ওই রুমে প্রবেশ করেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তারা ইমতিয়াজকে মারধর করে তার কাছে বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। ইমতিয়াজ টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা তার বুকে, পিঠে আঘাতসহ প্রচ মারধর করেন। একপর্যায়ে ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়। এরপর প্রাইভেট কারে করে তার লাশ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ফেলে দেন চক্রের সদস্যরা। অ্যাপের মাধ্যমে এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নিতেন। পরে আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও, ছবি রেকর্ড করে ওই ব্যক্তির কাছে টাকা আদায়ের চেষ্টা করতেন। ভুক্তভোগীরা সামাজিক অবস্থানের কারণে কখনোই এ বিষয়ে মুখ খুলতেন না। চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা জমা হতো চক্রের সদস্য আরাফাতের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) গোলাম সবুর বলেন, ইমতিয়াজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি নিখোঁজ হন। এ নিয়ে ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহামিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পর দিন ৯ মার্চ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের একটি ঝোঁপের ভিতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়। এ সময় অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়। ১০ দিন পর পরিবার জানতে পারে, ইমতিয়াজ খুন হয়েছেন। পরে আদালতের অনুমতিতে ওই লাশ উদ্ধার করে শনাক্ত করেন ইমতিয়াজের স্বজনরা। ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থপতি ইমতিয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে বাসা থেকে তার লাশ নামিয়ে মেঘের প্রাইভেট কারে উঠিয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোঁপে ফেলে দেন। পরে গাড়িতে করে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিন রোডে নামিয়ে দিয়ে আরাফাত, মেঘ, মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ যান। পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান তারা। আসামিদের ভারতে অবস্থান শনাক্ত করলে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করে। তখন আসামিরা ভারত থেকে পালিয়ে ফের একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর ডিবি মিল্লাত হোসেন মুন্না, আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেফতার করে। পরে এদের সিরাজদিখান থানায় হস্তান্তর করেছে ডিবি।

 

সর্বশেষ খবর