সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসির সংলাপে সাড়া মিলছে না

গোলাম রাব্বানী

ইসির সংলাপে সাড়া মিলছে না

নির্বাচন কমিশনের সংলাপে সাড়া মিলছে না। প্রথম-দ্বিতীয় দফায় সংলাপ বর্জন করা বিএনপিসহ নয়টি দলকে আবারও অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে তারা যাবে না। অন্যদিকে আট রাজনৈতিক দলের নেতারাও নির্বাচন কমিশনের সংলাপে না যাওয়ার কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোনো দল ইসির অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণে ক্ষুব্ধ। অনেক দল বলছে, সংলাপে না গেলেও সিইসিকে পাল্টা চিঠি দিয়ে অবস্থান জানিয়ে দেবে তারা। এ ছাড়া সিপিবি, বাসদ ও কল্যাণ পার্টিসহ কয়েকটি দলকে দেওয়া সিইসির চিঠিতে ভুল ছিল। পরে গত শনিবার আবারও আটটি দলকেই নতুন করে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। তবে আগের চিঠি প্রত্যাহার না করেই নতুন চিঠি দেওয়া এবং চিঠিতে ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলোচনার কথা লেখা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলগুলো।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের মার্চ থেকে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছিল। এর অংশ হিসেবে জুলাইয়ে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। তার আগে ইভিএম যাচাইয়ে দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। সেই ইভিএম দেখার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করেছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এরপর গত ২৩ মার্চ তৃতীয় দফায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিএনপি ও তার মিত্র দলের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় আসার অনানুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সাড়া না পাওয়ার পর সংলাপ বর্জন করা আরও আট দলকে গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলাদা আলাদা চিঠি দেন। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল এখনো ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।  সংলাপ বর্জন করা দলগুলো হলো- বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।

ইসির সংলাপে যোগ দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। আমি ঢাকায় এসেছি। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যাওয়া, না যাওয়া পরের বিষয়। তবে একটা আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানে অনানুষ্ঠানিক কীসের আলোচনা? চিঠির ভাষা কী আছে দেখি। আলোচনা করে পরে জানাব।  

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ইসির দুটি চিঠি এখন তাদের হাতে। তারা এখন কনফিউজড-ক্ষুব্ধ। ইসি একটা চিঠি প্রত্যাহার না করে কেন আরেকটা দিল? তিনি বলেন, ইসির আমন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তিনি রাজনৈতিক সফরে বাইরে আছেন বলে জানান।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন- নির্বাচন কমিশনের কাছে আগে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ইসি কী মনে করে, সে বিষয়ে টেলিফোনে বা চিঠি দিয়ে জানতে চাইবেন। তারপর তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন।   

ইসির অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় যাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাংবিধানিক পোস্ট কোনো অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করতে পারে না চিঠির মাধ্যমে। অনানুষ্ঠানিক কথাটা হাস্যকর কথা। প্রথমে আমরা যে কারণে যাইনি, সে কারণেই যাব না। এর একটা রাজনৈতিক সমাধান জরুরি, আসলে নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারে না। ইসির ওই ক্ষমতাটা নেই। ফলপ্রসূ হবে বলেও মনি করি না। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখ বলেন, আমরা সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে আমরা আগেও যাইনি। এবারও না যাওয়ার সম্ভাবনা ধরে নেওয়া যেতে পারে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, চিঠি পেয়েছি। আগামী শুক্রবার আমাদের দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। বৈঠকের পর আমরা লিখিতভাবে জানাব।

এ বিষয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, কোনো বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে ওই নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বিষয়। এখানে ইসির কিছু করার থাকে না। ইসি জোর করে কাউকে নির্বাচনে আনতে পারে না। পরপর দুবার কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে ইসি তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।

বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না এলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে নির্বাচন কমিশন মনে করে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এখন ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে তারা ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেবে না, ইসির চিঠির জবাবও দেবে না। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মো. আলমগীর বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ইতোমধ্যে বলেছেন তারা বিএনপির কাছ থেকে লিখিত উত্তর আশা করছেন। বিএনপি জবাব দিতে পারে, নাও দিতে পারে। একটা সময় পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর