বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাণিজ্যের সুপারিশ

আমদানি-রপ্তানিতে হবে ডলারের অভিন্ন রেট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানি আয় বাড়াতে আমদানি-রপ্তানিতে বিদ্যমান ডলারের মূল্য ব্যবধান (গ্যাপ) কমানোর সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের শুল্ক হ্রাস এবং রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাক নির্ভরতা কমাতে সম্ভাবনাময় শিল্পের কাঁচামালের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে ওই মন্ত্রণালয়।

আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, এনবিআর, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধি অংশ নেন বলে জানা গেছে। ভারচুয়াল সভার অংশীজনেরা জানান, বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতি একটি বড় ফ্যাক্টর। এ ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্যের দাম বড় প্রভাব রাখে। সে কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাসের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাকের নির্ভরতা কমাতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লাস্টিকপণ্যের মতো সম্ভাবনাময় শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাসেরও প্রস্তাব দিয়েছে। সভাসূত্র জানায়, বাজেট সুপারিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ডলারের অভিন্ন রেট নির্ধারণে। দেখা যাচ্ছে, আমদানি ব্যয় বা এলসি দায় মেটাতে আমদানিকারকদের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো ১১০ টাকা বা তার বেশি দাম নিলেও এই ব্যবসায়ীরাই যখন তাদের রপ্তানি আয় আনতে যাচ্ছেন তখন প্রতি ডলারের দাম পাচ্ছেন ৯৯ টাকা থেকে ১০০ টাকা। একই মুদ্রার মূল্য নির্ধারণে এত বেশি পার্থক্য থাকায় রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয় দেশে আনতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকে আবার ডলার বিদেশে রেখেই এলসি করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রপ্তানি খাত যেহেতু কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে- সে কারণে আমরা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য নির্ধারণে পার্থক্য কমাতে বলেছি। বর্তমানে আমদানির জন্য ডলারের যে রেট, রপ্তানি আয়ের বিপরীতে তার চেয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা কম পায় রপ্তানিকারকেরা। ফলে অনেকেই রপ্তানি আয় আনতে দেরি করেন। বাজেট প্রস্তাবে আমরা বলেছি, পার্থক্য কমিয়ে ডলারের দাম আমদানির কাছাকাছি বা সমমূল্য ধরে অভিন্ন করা হলে রপ্তানিকারকেরা তাদের আয় দেশে দ্রুত আনতে উৎসাহী হবেন। এতে করে যেমন রপ্তানি আয় বাড়বে, তেমনি ডলার সংকটও কমবে। সভায় উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, করোনা মহামারির পরপরই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি করেছে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে; রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি জ্বালানি ও সারের দাম বাড়ায় আমদানিতে অতিরিক্ত ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর মতো কঠিন শর্ত মানতে হয়েছে সরকারকে। আবার এ ধরনের শর্তের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের মানুষের ব্যয় বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রণয়নে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। একইভাবে যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়েও উদ্যোগ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর