শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

জান্নাত লাভের অফুরন্ত সুযোগ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

জান্নাত লাভের অফুরন্ত সুযোগ

জান্নাত আল্লাহতায়ালার অশেষ নেয়ামতগুলোর মধ্যে একটি নেয়ামত। মানবজাতির ধরাপৃষ্ঠে আগমনের মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর আনুগত্যশীল হয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করে পরকালে জান্নাত লাভ করা। পবিত্র কোরআনে জান্নাতকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করে ইরশাদ হয়েছে। যেমন- জান্নাতুল ফিরদাউস (জান্নাতের সর্বোচ্চ বাগান), দারুস সালাম (শান্তির নীড়), দারুল খুলদ (চিরস্থায়ী বাগান), জান্নাতুন নাঈম (নেয়ামতপূর্ণ বাগান) ইত্যাদি। কোরআন-হাদিসে জান্নাতের পরিচয় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।

জান্নাতের পরিচয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী) যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য এমন সব বাগান প্রস্তুত রয়েছে, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে। যখনই তাদেরকে তা থেকে রিজিক হিসেবে কোনো ফল দেওয়া হবে, তারা বলবে, এটা তো সেটাই যা আমাদেরকে আগেও দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে এমন রিজিকই দেওয়া হবে যা দেখতে একই রকমের হবে। তাদের জন্য সেখানে থাকবে পূতঃপবিত্র স্ত্রী এবং তারা তাতে অনন্তকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারাহ-২৫) হাদিসের ভাষায় জান্নাতের পরিচয় হচ্ছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কখনো কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৮৭১)

জান্নাতের নেয়ামত অপরিসীম। ইরশাদ হচ্ছে- ‘(জান্নাতিগণ) সোনার তারে বোনা উঁচু আসনে, তারা পরস্পর সামনাসামনি হেলান দিয়ে থাকবে। তাদের সামনে (সেবার জন্য) ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা, এমন পানপাত্র, জগ ও ঝরনা নিঃসৃত সুরাপাত্র নিয়ে, যা পানে তাদের মাথাব্যথা হবে না এবং তারা চেতনা হারাবে না। এবং তাদের পছন্দ মতো ফল নিয়ে এবং তাদের চাহিদা মতো পাখির গোশত নিয়ে এবং তাদের জন্য থাকবে বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট হুর, যেন তারা লুকিয়ে রাখা মুক্তা। (এগুলো হলো) তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ’। (সুরা ওয়াকিয়া : ১৫-২৪) রমজান মাসজুড়ে ইবাদতের বিশাল সুযোগ চলতে থাকে। হাদিসের ভাষায় রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা বহু জাহান্নামিকে জাহান্নাম হতে জান্নাতে প্রবেশ করান। এই মাস জান্নাত লাভের মাস। আর ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে জান্নাত হাসিল করতে হয়। এ জন্য রমজানে আমরা নানা ধরনের ইবাদত-বন্দেগি করি। আল্লাহর কত রহমত আমরা দেখতে পাই। এই মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে কোনোরূপ ক্লান্তি অনুভব হয় না। কারণ রমজান মাসজুড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর এক বিশেষ রহমত বর্ষণ হতে থাকে। যার ফলে রোজাদার ব্যক্তি যে কোনো ইবাদতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রমজান মাসে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র ইবাদতের বিরাট বিরাট সাওয়াব দেওয়া হয়। নফলের সাওয়াব হয় ফরজ সমপরিমাণ। ইবাদত যার যত বেশি হবে তার প্রতিদান-সাওয়াবও তত বেশি হবে। পরকালে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত অর্জন হবে এবং দুনিয়ার জীবন সার্থক হবে। তাই সর্বাবস্থায় জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সর্বদা যত্নবান হতে হবে। বড় পুরস্কার নেওয়ার জন্য বড় বেশি মেহনত করতে হয়। হজরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে কামনা-বাসনার বস্তু দ্বারা। (সহিহ মুসলিম : ৬৮৬৯) বোঝা গেল, জান্নাত লাভে অনেক অনেক বেশি মেহনত করতে হয়। রমজান মাসে যেমন আমরা কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, দান-খায়রাত বেশি করে থাকি এবং আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ একটু বেশি নিয়ে থাকি, রমজান ছাড়া অন্যান্য মাসেও সেগুলোর ধারাবাহিকতা যথা নিয়মে ঠিক রাখব ইনশা আল্লাহ। এর দ্বারা ইবাদতে আসল স্বাদ অনুভব হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে জান্নাত লাভের মাস রমজানে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে জান্নাত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর