জাতীয় সংসদের ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষে চলমান বিশেষ অধিবেশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তারা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সময় আগামী নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। গতকাল জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলমান বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা বিশেষ অধিবেশনের বৈঠকে ধারাবাহিকভাবে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
আলোচনায় অংশ নেন চলতি সংসদের সদস্য, সত্তরের এমএনএ ও ১৯৭৩-এর প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রবীণ সংসদ সদস্য রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সরকারি দলের উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মোসলেম উদ্দিন, মো. সাইফুজ্জামান, নাহিম রাজ্জাক, তানভির শাকিল জয়সহ ২৮ জন সংসদ সদস্য। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিরোধী দলের হুইপ মুজিবুল হক, মশিউর রহমান রাঙ্গা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও গণফোরামের মোকাব্বির খান। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য আজ নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী নির্বাচনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচনটাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে সোনার বাংলা বাস্তবায়িত করব এ প্রত্যাশা করি। সরকারদলীয় সদস্য তানভির শাকিল জয় বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে দেশে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজকে আমাদের মহান স্বাধীনতা, স্বাধীনতাযুদ্ধকে অপমান করা হয়। আজকে স্বাধীনতা দিবসকে অপমান করে বিকৃতভাবে চাইল্ড এক্সপ্লোটেশনের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়।’
সত্তরের নির্বাচনের পর যুদ্ধ শুরু হবে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু : চলতি সংসদের সদস্য, সত্তরের এমএনএ ও ১৯৭৩-এর প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেছেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবে, এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার বোর্ডেই বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আমি দরখাস্ত করলাম। আওয়ামী লীগের ইন্টারভিউ বোর্ডে বঙ্গবন্ধু বললেন, নির্বাচনের পর যুদ্ধ শুরু হবে, এর আগেই পালাবে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একমাত্র প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছেন। তার আগে অনেক নেতা ছিলেন তারা কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। বাংলাদেশের মানুষের পুরাপুরি মুক্তি চাননি। তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছেন।’ বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি জানতে চান, ‘বিশ্বে কোন রাজনৈতিক সংজ্ঞায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে! আব্রাহাম লিঙ্কন থেকে কেউই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোথাও নাই, থাকবে না, থাকবে না। যাদের নির্বাচন করার দরকার করবেন।’
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে বিএনপি যা বোঝায় তা নয় : সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে বিএনপি যেটা বোঝায়, আদতে সেটা নয়। এ সময় শাজাহান খান দার্শনিক হ্যারল্ড লাস্কির তত্ত্ব উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের দেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষিতের হার, অর্থনৈতিক অগ্রগতির যে চিত্র, এর ওপর ভিত্তি করে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়ার কথা। তা না হলে যে কথা বলেছেন হ্যারল্ড লাস্কি, তা হবে শিশুর হাতে লোহার খুন্তি তুলে দেওয়ার মতো।’ জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমাদের মতের দ্বিমত থাকতে হবে। তবে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, সংসদকে সত্যিকার কার্যকর করতে চাইলে এই সংসদের মধ্যে মানুষের দুঃখ-কষ্ট-সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে হবে। সেই আলোচনা না হলে সবাই এখানে বললেও কেন্দ্রবিন্দু হবে না। সংসদের বাইরের কথাই কেন্দ্রবিন্দু হবে। যারা বাইরে আছেন তাদের কথাই গণমাধ্যমে প্রাধান্য পাবে। এটা কেবল বিরোধী দলের দায়িত্ব নয়। এটা আজ সরকারি দলের দায়িত্ব। সবাই মিলে আমাদের জনগণের কথা বলতে হবে। আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে। কে করবে? বলা হয়েছে এটা সরকারের দায়িত্ব নয়। এটা আমিও বিশ্বাস করি, সরকারের দায়িত্ব নয়। সব দলকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব হতে পারে না। দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সেই আস্থা তৈরি করতে হবে। সেই আস্থা যদি তৈরি করা যায়, এর পরও যদি কোনো দল না আসে, কোনো কিছু বলার নেই। কিন্তু সেই পরিবেশ আনার জন্য যে সহায়তা দরকার, সরকারকে নির্বাচন কমিশনকে তা দিতে হবে। সেটাই হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব।