মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

এনজিও কর্মী পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মানব পাচার গ্রেফতার ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুয়া এনজিও কর্মী পরিচয়ে জাল কাগজপত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রথমে পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়ানোর নামে অন্যান্য দেশের জাল অ্যান্ট্রি ও এক্সিট সিল ব্যবহারের অভিযোগে চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল ডিবি সূত্রে এসব জানা গেছে। এ ঘটনায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিওনাল সিকিউরিটি অফিসার মাইকেল লি দুটি মামলা করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রেফতার ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশে দালালদের কাছ থেকে ভুয়া নথিপত্র সংগ্রহ করে দূতাবাসকে  প্রতারিত করেছে। ১৫ মার্চ রাজধানীর গুলশান থানায় প্রথম মামলাটি করেন তিনি। সেখানে প্রথমে চারজনকে আসামি দেখানো হয়। এরা গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে মার্কিন দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেন। সেই পাসপোর্টে নেপাল, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের সিল দেখা যায়। পরে দূতাবাস সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখেন প্রতিটি সিলই জাল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দূতাবাস জানতে পারে যে তারা অজ্ঞাত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করেছেন। সেখান থেকেই পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে এ জাল সিল বসানো হয়েছে। মূলত নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে তারা ‘কথক একাডেমি’ নামে একটি এনজিওর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ডিবি বলছে, প্রতারণার মাধ্যমে এরই মধ্যে কয়েকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে বলেও তারা জানতে পেরেছে। ওই চারজনের ভিসা প্রক্রিয়াকালে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পরে তারা মামলা করে। ওই চারজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ। চারজনের মধ্যে আমেরিকার ভিসা পেতে একজন ইতোমধ্যে ২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন এবং গ্রেফতার আরেকজন বলেছেন ভিসা পেলে তাকে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। ওই চারজন হলেন- গোলাম কিবরিয়া, সাজ্জাত মো. রিফাত, শাহ নেওয়াজ খান রাফাত ও শাহীন আকন।

পরে মামলাটি তদন্ত করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) ডিভিশনের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সিলেট, শরীয়তপুরসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় চক্রটিকে শনাক্ত করে। ৩ এপ্রিল মানব পাচার চক্রের হোতা সন্দেহে আবুল কালাম শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় তার আরও দুই সহযোগীকে গ্রেফতার দেখানো হয়। অভিযুক্ত আবুল কালাম শেখ ‘কথক একাডেমি’ নামক কথিত এনজিওর আড়ালে ২০০৮ সাল থেকে এ প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। তিনি বিদেশের বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা বলে এবং এ জন্য মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকা, জার্মানি, জাপান, ইতালি, দুবাই, ফ্রান্সসহ আরও বিভিন্ন দেশে মানুষকে পাঠাতেন। এ জন্য গ্রাহকভেদে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতেন। আবুল কালাম শেখের দাবি, তার পরিচালিত ‘কথক একাডেমি’ ইউএন ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের (ইকোসক) স্পেশাল কনসালটেটিভ স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত। তিনি ভারত থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখায় বেশ পারদর্শী। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুটি প্রতারণার মামলা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর