বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

মনোনয়নপত্র কেনার হিড়িক আছে দলীয় কোন্দল

রফিকুল ইসলাম রনি

মনোনয়নপত্র কেনার হিড়িক আছে দলীয় কোন্দল

গাজীপুর ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হতে পারে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সিটি ভোটের আগে কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্র্থীর পক্ষে মাঠে না নামলে নির্বাচনী ফসল অন্যদের ঘরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দলীয় নেতা-কর্মীদের। আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনের মধ্যে এ দুই সিটিতে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে গাজীপুর সিটিতে মোট ১১ ও সিলেট সিটিতে  ১০ জন প্রার্থী নৌকা পেতে গতকাল পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আজ বুধবারও দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। সবচেয়ে কম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে রাজশাহী সিটিতে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলটি আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। মেয়র মনোনয়ন ঘিরে তিনটি গ্রুপ প্রকাশ্যে এসেছে। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সিটি নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রয়োজন মনে করছেন এই তিন গ্রুপের কর্মী-সমর্থকরা। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও চান সিটি করপোরেশন তাঁর হাতের মুঠোয় থাক। সিটি নির্বাচনে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে সমর্থন করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের দীর্ঘদিনের বিরোধ সিটি নির্বাচন কেন্দ্র করে আবারও সামনে চলে এসেছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু ২০২১ সালে এক বিতর্কিত মন্তব্যের দায়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন ও মেয়র পদ হারান তিনি। জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে অনেকটাই নির্ভার ছিলেন আজমত উল্লা খান। কিন্তু সম্প্রতি দলের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়। এর পরই আগামী নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন চাওয়ার পথ খুলে যায় জাহাঙ্গীরের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছেন, আজমত উল্লা খান একাধিকবার টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এ এলাকায় তাঁর ভোটব্যাংক রয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের মাঝেও তাঁর বিশেষ অবস্থান রয়েছে। কিন্তু পুরো গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরের বড় প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন দলমত, শ্রেণি-পেশার লোকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে। তরুণ ভোটারদের একটা বিরাট অংশ জাহাঙ্গীর আলমকে আবারও মেয়র হিসেবে দেখতে চায়। ভাসমান ভোটার (যারা স্থায়ী বাসিন্দা নন, কিন্তু এখন সিটির ভোটার) তারাও জাহাঙ্গীরকে চান। ফলে এখানে মনোনয়ন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই দেবেন।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানান, আজমত উল্লা ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে যিনিই মনোনয়ন পান, তাঁকেই দলের অভ্যন্তরীণ বাধা সামাল দিতে হবে। কারণ এখানে দুই পক্ষের কেউ না কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেনই।

আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ফের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তাঁরা সবুজ সংকেত পেয়ে গেছেন বলেও গুঞ্জন আছে। অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিষয়ও মোটামুটি নিশ্চিত। দলীয় হাইকমান্ড থেকে তাঁকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আর সিলেটে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা গেলেও সেখানে বর্তমান মেয়র আরিফুল হকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে দলের প্রার্থীকে। বিএনপি ধানের শীষ নিয়ে ভোট না করলেও আরিফুল হক এ নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া যাকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় সেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় নেতা-কর্মীকে মাঠে নামানোও চ্যালেঞ্জ হতে পারে। গত সিটি নির্বাচনে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিকেও হেরে যেতে হয়েছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। এবার সিটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকতে পারে বলে স্থানীয় সূত্র জানান। সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রথমত আমরা চাই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ফলাফল যা-ই হোক, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমাদের কাম্য।’ অভ্যন্তরীণ কোন্দল কোনো ফ্যাক্টর হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতা আছে, কিন্তু আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই নৌকা দেব। যেহেতু আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, তাই বাইরে থেকে কেউ যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সে ক্ষেত্রে আমরা কোনোভাবেই দলের বিদ্রোহী সহ্য করব না। আর যদি ভিন্ন কিছু হয় সে ক্ষেত্রে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দলীয় সিদ্ধান্ত নেব।’ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র আজ বুধবার বিতরণ ও জমাদান শেষ হবে। ১৮ এপ্রিল গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সেখানেই নির্ধারণ করা হবে পাঁচ সিটিতে কারা হবেন নৌকার মাঝি। গতকাল পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মেদ, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগরের সাবেক সদস্য আবদুল আলীম মোল্লা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য আশরাফুজ্জামান সেলিম। খুলনা সিটিতে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রুনু রেমা, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, খুলনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, আওয়ামী যুবলীগের সদস্য আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মঈন তুষার, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম কিনেছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাহি উদ্দিন আহমেদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ সেলিম। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মাহফুজুল আলম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সর্বশেষ খবর