মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত : শবেকদর

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত : শবেকদর

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” আয় আল্লাহ তুমি বড়ই মাফ করনেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দিতেই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দাও। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ, যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি শবেকদর, তাহলে কী দোয়া করব? জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখিত দোয়াটি পড়তে বলেন। তাওবা করে, পূর্ণ ইমান, ইয়াকিন ও বিশ্বাসের সঙ্গে আমরা যদি আরবিতে দোয়াটি পাঠ করতে পারি। খুব ভালো। আরবিতে ভালো বলতে না পারলে, অন্তত এতটুকু তো বলতে পারব, হে আল্লাহ! আপনি দয়াময় মেহেরবান। ক্ষমাকারী ও ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। আমাদের জীবনের সব জানা অজানা, গোপনে প্রকাশ্যে, দেখা না দেখা, নতুন পুরাতন গুনাহগুলো মাফ করে দিন। অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত শবেকদর। আল্লাহপাক উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য যে কয়েকটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত দান করেছেন। তার মধ্যে শবেকদর অন্যতম। সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাতটি রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতের যে কোনো একটিতে অন্বেষণের জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন। একটি মাত্র রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এক হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। ভাগ্যবান ওই সব লোক যাদের এ রাতে ইবাদত বন্দেগির তৌফিক হয়। কেননা এই একটিমাত্র রাত যে ইবাদতে কাটালো সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়ে বেশি সময় ইবাদতে কাটালো। সুবহানাল্লাহ। বেশির পরিমাণও জানা নেই যে, তা হাজার মাস অপেক্ষা কত মাস অধিক উত্তম? মহিমান্বিত ও সম্মানিত রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি কোরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ।’ সুরা আল কদর (১-৩)। এই সুরা নাজিলের প্রেক্ষাপট অনেক দীর্ঘ। সংক্ষেপে বলতে গেলে, মুসলমানদের সান্ত্বনার জন্য আল্লাহপাক সুরাটি হজরত জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে সাইয়্যেদুল মুরসালিন হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর শবেকদরে নাজিল করেন। ফজিলত পূর্ণ রাতটি কোন মাসে? এ ব্যাপারে রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘মাহে রমজান এমন মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে।’ (বাকারা-১৮৫)। সমস্ত ঐশী কিতাব মাহে রমজানেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন নাজিল করেছেন। হজরত আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- তাওরাত ৬ রমজানে, ইঞ্জিল ১৩ রমজানে এবং জাবুর ১৮ রমজানে আর পবিত্র কোরআন শবেকদরে অবতীর্ণ হয়েছে। রাতটি রমজানের কোন তারিখে? ইমাম বুখারি ও ইমাম তিরমিজি (রহ.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের কোনো বিজোড় রাতে খোঁজ কর।’ অবশ্য কোনো কোনো আলেম রমজানের ২৭তম রাত (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবেকদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তবে শুধু ২৭তম রাতেই শবেকদর তা নিশ্চিত বলা যাবে না। কারণ হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই রাতটি কোন রাত তা তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলে যাননি বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন। মহান আল্লাহ চান বান্দা কয়েক রাত ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করে এ মহিমান্বিত ও সম্মানিত রাতের সন্ধান পাক। আবার রাতটি পবিত্র কোরআন নাজিলের রাতও। যারা কোরআনকে আমলের নিয়তে আঁকড়ে ধরবে, তারা পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে সম্মানিত হবেন। এ রাতেই মানবকল্যাণে আল্লাহ মানুষের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ফেরেশতাদের জানান। আল্লাহ বলেন, ‘এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফয়সালা জারি করা হয়’ (সুরা দুখান-৪)। মহান আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘ফেরেশতারা ও রুহ জিব্রাইল (আ.) এ রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়, সে রাত পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’ (সুরা আল-কদর ৪-৫)। হাদিসে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি শবেকদরে ইমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে (সুবহানাল্লাহ) (বুখারি-মুসলিম)। রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একটি বড় গুণ। শবেকদরে করণীয় : ১. বেশি বেশি পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত করা। ২. নফল নামাজ আদায় করা। ন্যূনতম ১২ রাকাত থেকে যতবেশি সম্ভব পড়া। নফল নামাজ পড়ার নিয়মে দুই রাকাত নফল পড়ছি এই বলে তাকবির বেঁধে যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া। এ নিয়তে নামাজ শুরু করে আবার সঠিকভাবে শেষও করা। নামাজে সুরা ফাতেহার সঙ্গে নিজের জানা যেকোনো সুরা মিলালেই চলবে। সালাতুল তওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও পড়া যেতে পারে। ৩. জিকির ও দোয়া করা। ৪., ইস্তেগফার ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া। ৫. মোনাজাত : মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দাহ তার প্রভুর কাছে চায়। প্রভু এতে ভীষণ খুশি হন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তাঁর কাছে না চাইলে অসন্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন’ (তিরমিজি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দারবারে মোনাজাত করব, মাগফিরাত, রহমত কামনা করব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করব। চোখের পানি ফেলে কান্নাকাটি করে দোয়া করব। তিনি আমাদের খালি হাতে ফেরাবেন না ইনশাল্লাহ। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কায়মনোবাক্যে সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর