বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঋণের বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রথম কিস্তির ব্যবহার এবং দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার শর্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে আইএমএফ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানান, আইএমএফের এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে প্রবেশ করে। বিকাল ৩টায় বৈঠক শেষ হয়। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আগামী নভেম্বরে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে অর্থনীতির সার্বিক অগ্রগতি মূল্যায়নে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। ফলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শর্তানুযায়ী অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশকে। ২ মে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে আইএমএফ স্টাফ কনসালটেশন মিশন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে। আইএমএফের ঋণ নিতে ছোট বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। এর বেশির ভাগই আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট। মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপরে ছেড়ে দিয়ে একটিই দাম ঠিক করা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এসব শর্তের একটি আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত শুল্ককর আদায় করতে হবে এনবিআরকে। অতিরিক্ত শুল্ককর হতে হবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে আগামী জুন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি যাচাই করবে এবারের মিশন। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে যেমব শর্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়নে আসছে বাজেটে কী কী উদ্যোগ থাকছে, তা-ও পর্যালোচনা করা হবে। বৈঠকসূত্র জানান, ঋণের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া সংস্কারের অগ্রগতি আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটির দেওয়া শর্ত বিপিএম৬-এর আওতায় নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) গণনা পদ্ধতি ছাড়া অন্য সব শর্ত আগামী জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠককালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের স্টাফ ভিজিট একটি রুটিন ওয়ার্ক। সদস্য সব রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর এ রকম সফর তারা করে থাকেন। এবারের সফরটিও সে রকম। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে আইএমএফের ঋণে অর্থের ব্যবহারের অগ্রগতি সম্পর্কিত বিষয়াদিও যুক্ত থাকবে।

মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশকে দেওয়া আইএমএফের ঋণের অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি সংক্রান্ত যে আলোচনা হওয়ার বিষয় রয়েছে, তার মধ্যে ডলারের বিনিময় হার একটিতে নিয়ে আসা, ঋণ সুদহার বাজারমুখী করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনার পদ্ধতি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আসন্ন মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু সংস্কার আসবে। এর মধ্যে অন্যতম ব্যাংকের ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা। এ ছাড়া সিঙ্গেল রেটে ডলারের দর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ১০৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। আকু (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) পেমেন্ট ছাড়া বড় ধরনের আউট ফ্লো নেই। ফলে ডলারের বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে না।

আইএমএফ ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে আইএমএফ ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ দেবে আইএমএফ।

এর আগে ও পরে বাংলাদেশ পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোসহ আর্থিক খাতের কাঠামো ও নীতি সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে।

সর্বশেষ খবর