শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাঁচ টার্গেটে মাঠে আওয়ামী লীগ

সিটিতে জয়, কোন্দল নিরসন, এমপি পদে যোগ্য প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ

রফিকুল ইসলাম রনি

পাঁচ টার্গেটে মাঠে আওয়ামী লীগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলকে এখন থেকে সুসংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোট-মহাজোটের হিসাব পরে, আগে সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে নজর আওয়ামী লীগের। তাই পাঁচ প্রধান লক্ষ্য অর্জনের জন্য মাঠে নামতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এর মধ্যে রয়েছে- পাঁচ সিটির আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, সংসদে নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাই এগিয়ে রাখা। অন্যদিকে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সর্বাধিক প্রচার-প্রচারণা, সরকারবিরোধী অপপ্রচারের জবাব, জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে জনমত নিজেদের অনুকূলে নেওয়া। সবকিছুর মূলে রয়েছে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্য। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি সব সময়ই ছিল। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, এমপিরা রমজানে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে সক্ষম হয়েছেন। পাঁচ সিটিতে ভোট হবে। ওই ভোটে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সভানেত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী বাছাই, সরকারবিরোধী অপপ্রচারের জবাব, বিগত ১৪ বছরের সরকারের উন্নয়নগুলো তুলে ধরব। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মিটিয়ে ফেলা হবে। স্থানীয়ভাবে সম্ভব না হলে ঢাকায় ডেকে এনে সমাধান করব।’

জানা গেছে, ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ এসব সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটিতে নৌকাকে বিজয়ী করে জনগণ আওয়ামী লীগের উন্নয়নের সঙ্গে- এমন বার্তা দেওয়া। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ লালনকারীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, দেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির হাতে থাকে সেজন্য জনগণকে সচেতন করব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে যে দেশ এগিয়ে গেছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরব। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন যে চলমান থাকে সেগুলোও কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, পথসভায় জনগণকে জানান দেব। এসব কাজ চলমান আছে, এখন আরও জোরালোভাবে মাঠে নামব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে আমরা ঘরে ফিরব।’ জানা গেছে, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে বরিশাল ও গাজীপুরে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এ বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া এ দুই সিটিতে নির্বাচনী প্রচারণায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটি ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো হবে। এরই মধ্যে নেতাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা কী হবে তার নির্দেশনা দেওয়া শুরু হয়েছে।

দলের বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। এখন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হবে। সেখানেই সিটি নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় পর্যায়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, নেত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কা নৌকা’ এ স্লোগানে কাজ করতে এক মোহনায় থাকব।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের দলাদলি না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গত ঈদ অধিকাংশ এমপিই নিজ নিজ এলাকায় করেছেন এবং ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়েছেন। পিছিয়ে ছিলেন না নৌকাপ্রত্যাশীরাও। দলীয় সভানেত্রী বরাবরই বলে আসছেন, আগামী নির্বাচন হবে অনেক চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অধিকতর যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজ করা হচ্ছে। বিকল্প প্রার্থীও মাঠে রাখা হবে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী নানা অপপ্রচারের জবাব ও উন্নয়ন প্রচারের গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা, তাঁর উন্নয়নের মহাযজ্ঞ, সব নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী যদি হয় আর নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা-বিজয় ঠেকাতে পারে এমন কোনো শক্তি নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা। ঈদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে যদি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি তাহলে সিটিসহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হব।’

 

সর্বশেষ খবর