সুদানে সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরুর পর সেখানে আটকেপড়া আতঙ্কিত বাংলাদেশিদের বড় অংশই ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের উদ্ধার করে নিয়ে এলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো একক কোনো সফল উদ্ধার অভিযান হয়নি। এ ধরনের উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। এর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিকে গতকালও উদ্ধার করেছে সৌদি আরব। সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সুদান থেকে সবশেষ জাহাজটি জেদ্দায় পৌঁছেছে গতকাল সকালে। এইচএমএস জুবাইল নামে ওই জাহাজে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘানা, লেবানন, নাইজার, লিবিয়া, কানাডা ও গিনির মোট ৫২ জন নাগরিক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে ২০০ আরোহী নিয়ে সুদান থেকে জেদ্দায় পৌঁছায় সৌদি জাহাজ এইচএমএস রিয়াদ। এতে পাকিস্তান, বাহরাইন, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনসহ ১২টি দেশের নাগরিক ছিলেন। সুদানে সংঘাত শুরুর জেরে ২৪ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের উদ্ধারে হাত বাড়ায় সৌদি আরব। দেশটি এখন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭৯৬ জনকে উদ্ধার করেছে। এদের মধ্যে মাত্র ১১৯ জন সৌদির, বাকি ২ হাজার ৬৭৭ জন ৭৮ দেশের নাগরিক। সৌদির এই উদ্ধার অভিযানের সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা ছিল ২৬ এপ্রিল। ওইদিন ৫৮ দেশের ১ হাজার ৬৮৭ জনকে সুদান থেকে সরিয়ে নিয়েছিল তারা। সৌদির উদ্ধার অভিযান শুধু সমুদ্রপথেই সীমাবদ্ধ নেই, আকাশপথেও চলছে আটকেপড়াদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, কর্মকর্তা, প্রবাসী নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সাহায্য করছে তারা। প্রথমে এসব লোককে জেদ্দায় নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের স্বদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ভারত তার কয়েক হাজার নাগরিককে গতকাল পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইটে ফিরিয়ে এনেছে। গতকাল তুরস্কের নাগরিকদের উদ্ধার করতে সে দেশের একটি উদ্ধারকারী উড়োজাহাজ খার্তুমের ওয়াদি সিদনা বিমান ঘাঁটিতে যাওয়ার পথে সেটিতে গুলি করা হয়। সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গুলির ঘটনায় কেউ হতাহত হননি এবং উড়োজাহাজটি ওয়াদি সিদনায় নিরাপদে অবতরণ করেছে। সেখানে এটিকে পরীক্ষা ও মেরামত করা হচ্ছে। ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে ব্যাপক লড়াই শুরু হয়। দেশটিতে কীভাবে বেসামরিক শাসন ফেরানো হবে, তা নিয়ে দুই ক্ষমতাধর সামরিক অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এ লড়াই চলছে। সুদানের বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে রয়েছেন আরেকটি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি দাগালো। সংঘাতে সুদানে এরই মধ্যে কয়েক শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। রাজধানী খার্তুম এবং এর আশপাশের নগরীজুড়ে মূল লড়াই চলছে। প্রায় ১ কোটি মানুষের নগরী খার্তুমে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি কিছুই নেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুদানের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন। অনেকেই অর্থকড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাসও আক্রান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানকার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসায়ও গুলির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জাজিরা প্রদেশের মাদানি শহরে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুদান থেকে ফেরার জন্য প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি নাগরিক নিবন্ধন করেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সৌদি আরবও এ বিষয়ে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তাদের ২ মে খার্তুম থেকে আনা হবে। পোর্ট সুদান থেকে জাহাজে করে সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের আনা হবে। সৌদি থেকে নিয়মিত বা বিশেষ ফ্লাইটে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের।