সোমবার, ১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আচরণবিধি নিয়ে চ্যালেঞ্জে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আচরণবিধি নিয়ে চ্যালেঞ্জে ইসি

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে ইসি কঠোর নির্দেশনা দিলেও সরকারদলীয় প্রার্থী তা উপেক্ষা করেছেন। এ জন্য নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গতকাল সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বসে গাজীপুর সিটির আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ৭ মে বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে নোটিসের ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি প্রতিপালনে স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে চিঠিও দিয়েছে ইসি। 

এ ছাড়া গতকাল নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণসূচি জারি করেন। রিটার্নিং অফিসার তাদের নির্বাচনী আচরণবিধি অবহিত করেন। তবুও তারা নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি না মানায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে কারণ দর্শাও নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, তাকে নির্বাচন কমিশনে এসে সশরীরে ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি জানান, রবিবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বসে কারণ দর্শাও নোটিস ও ইসির নির্দেশনাসহ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২৫ মে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটিতে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট হবে। তবে এসব এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে তথ্য এসেছে। ইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও প্রার্থী ও তাদের শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ জন্য আমরা কমিশন বসেছি। আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, যারা সরকারে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে আচরণবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগ থাকে। তাদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি বেশি, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারি দলের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পত্র দেব। যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য তাদের যেন অনুরোধ রাখেন আচরণবিধি যেন লঙ্ঘন না করে। তিনি বলেন, ‘অনেক দল রয়েছে। সরকারি দল যেহেতু এ বিষয়ে আন্তরিক, তাদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করব। দলের সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করব যেন তাদের দলীয় সদস্যদের আচরণবিধি মেনে চলে সে ব্যবস্থা নেন। একইভাবে সংসদ সদস্যদের বিষয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে স্পিকারকেও চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

আজমত উল্লাকে তলব : ইসি গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান কে মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রাক্কালে সভা, মিছিল, শোভাযাত্রা ও শোডাউন করার ফলে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কেন তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না অথবা তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ৭ মে বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এ ছাড়া, সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ-সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র) হিসেবে যাতে দলীয় কার্যক্রম গ্রহণকালে অথবা অন্য কোনো কার্যক্রম গ্রহণে আচরণবিধি মেনে চলেন তার জন্য পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে পত্র মারফত অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যাতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণকালে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছে।

সর্বশেষ খবর