নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে তাঁর শান্তি-নিকেতনের ‘প্রতীচী’ বাড়ির ১৩ শতক জমি ছেড়ে দিতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে যে উচ্ছেদ নোটিস দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে নাগরিক সমাজের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা কমিটি। এ সময় তারা প্রতিবাদী নাটক ‘রক্তকরবী’ প্রদর্শন করেন। গতকাল শান্তিনিকেতনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নাট্যকর্মী, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদরা। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরাও এতে অংশ নেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, এদিন সকালে ‘প্রতীচী’ বাড়ি সংলগ্ন মোড় থেকে প্রতিবাদী মিছিল শুরু হয় এবং উপাসনা গৃহের সামনের রাস্তা দিয়ে প্রতিবাদী গানের তালে তালে বিশ্বভারতীর সমবায় ব্যাংক পর্যন্ত পদযাত্রা করা হয়। এ সময় প্রতিবাদকারীদের হাতে ছিল পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। পরে রাস্তার ওপরেই নাট্যকর্মীরা ‘রক্তকরবী’ নাটক মঞ্চস্থ করেন। পথনাটিকার নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেন চৈতী ঘোষাল। এ কর্মসূচির আয়োজক ডা. অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, যেভাবে, যে ভঙ্গিমায় শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেনকে অপমান করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমরা নাগরিক সমাজ প্রতিবাদে শামিল হয়েছি। আপরদিকে এসব কর্মসূচির নিন্দা জানিয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা আদালতকে মর্যাদা দিয়ে থাকি। আদালত প্রতীচী বাড়ির সামনে ১৪৫ ধারা জারি করেছে। তা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। তারপরও সে ধারা লঙ্ঘন করে কী করে এত মানুষ জমায়েত হয়ে কর্মসূচি করতে পারে?’ উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেনের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ বাড়িতে নোটিস লাগিয়ে জোর করে দখলকৃত ১৩ শতক জমি খালি করার জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সেক্ষেত্রে আজ ৬ মের মধ্যে জায়গা খালি করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বলপ্রয়োগ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতীর এ নোটিসের বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেন বীরভূম জেলা আদালতের পাশাপাশি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার জরুরি ভিত্তিতে এ মামলার শুনানি হয়। তাতে ওই নোটিসের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে’র একক বেঞ্চ জানান, অমর্ত্য সেনের বিতর্কিত জমি সম্পর্কিত একটি মামলা চলছে বীরভূম জেলা দায়রা আদালতে। ওই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আগামী ১০ মে জেলা আদালতে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি। ততদিন পর্যন্ত বিতর্কিত ১৩ শতক জমি নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।