রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আঞ্চলিক রাজনীতিতে অংশীদারি বাড়ল

শেষ হলো দুই দিনের ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও ঝুঁকিসহিষ্ণু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে এবং মোকাবিলায় সুপারিশ গ্রহণের মাধ্যমে শেষ হলো ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন। ঢাকায় দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ২৫ দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধির ছিল অংশগ্রহণ। সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, আয়োজন করার মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারি সুদৃঢ় হয়েছে। পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, সম্মেলন মূলত ভারত মহাসাগরের  উপকূলবর্তী দেশগুলো নিয়ে আয়োজন করা হলেও এ ফোরামে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের আলোচনায় অনেক সুপারিশ ও মতামত উঠে এসেছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন নিরাপত্তা, বাণিজ্য, কানেকটিভিটি, সামুদ্রিক সম্পদ, সুনীল অর্থনীতি, পর্যটন, গ্রিন এনার্জি এবং পরিবেশগত ভারসাম্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা, সহযোগিতা এবং প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সম্মেলনে গতকাল শেষ দিনে চারটি প্লেনারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুরেশ প্রভু। আরও বক্তব্য দেন সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী মালিকি ওসমান, শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী নিমাল সিরিপালা ডি সিলভা, মাদাগাস্কারের মন্ত্রী জোসোয়া রাকোতোয়ারিজাওয়ানা। দ্বিতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। বক্তব্য দেন সিসিলিসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চার্লস ই ফনসেকা, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তান্দি দর্জি, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ প্রকাশ সৌদ, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ বদর বিন হামাদ বিন হামুদ আলবুসাইদি ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শেরম্যান। তৃতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়ার সহকারী মন্ত্রী টিম ওয়াটস, ভিয়েতনামের উপমন্ত্রী দো হাং ভিয়েত, জাপানের ভাইস মিনিস্টার তাকাজি কেই, আরব আমিরাতের সহকারী মন্ত্রী সাজিদ আল হাজেরি, কম্বোডিয়ার সচিব রাধচেভি, ইরানের উপদেষ্টা রাসৌল মৌসাভি। চতুর্থ সেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। বক্তব্য দেন মালদ্বীপের পররাষ্ট্র সচিব আহমেদ লতিফ, বিমসটেকের সেক্রেটারি জেনারেল তেনজিন লেখপেল, সার্কের সেক্রেটারি জেনারেল ইসালা ভেরাকো, ডি-৮-এর সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদির ইমাম, ফিলিপাইনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পল ভিনসেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর অধিভুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত শুক্রবার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হয় সম্মেলন। এতে মরিশাসের রাষ্ট্রপতি, মালদ্বীপের উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৭টি মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ মোট ২৫ দেশের সরকারি প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তথা সার্ক, ডি-৮ ও বিমসটেকের মহাসচিব এবং আরও কয়েকটি দেশ ঢাকাস্থ তাদের কূটনৈতিক মিশন এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, পণ্ডিত ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিসহ আরও প্রায় ১৫০ জন বিদেশি অতিথি সম্মেলনে যোগদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ এবং উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলই হবে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারক : যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সম্পৃক্ততা বাড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান। তিনি বলেছেন, এ অঞ্চলে যা ঘটবে তার মধ্য দিয়েই অনেকাংশে বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) তথা ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে ওয়েন্ডি শেরম্যান এমন মন্তব্য করেছেন। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ওয়েন্ডি শেরম্যান বলেন, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক তাৎপর্যকে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। ভারত মহাসাগর বিশ্বের পুরো সমুদ্রপৃষ্ঠের এক-পঞ্চমাংশ এবং এটি সারা বিশ্বের মানুষ ও অর্থনীতিকে সংযুক্ত করেছে। সারা বিশ্বে সমুদ্রপথে পরিবহনকৃত তেলের চালানের ৮০ শতাংশই ভারত মহাসাগরের জলসীমা অতিক্রম করে থাকে। আমাদের আবাসগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৎস্যভাণ্ডারও রয়েছে এ অঞ্চলে। সেগুলো এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান ও বিশ্বজুড়ে খাবার জোগানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং এটা বোঝা যায়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকে আমাদের সবার আগ্রহ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর