শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাঁচ সিটিতে চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা

সামাজিক মাধ্যম বন্ধ ও ইন্টারনেটের গতি স্লো করার প্রস্তাব, ইসির না

গোলাম রাব্বানী

আসন্ন পাঁচ সিটি ভোটের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ এবং ইন্টারনেটের গতি স্লো করার প্রস্তাব দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন কমিশন সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। দলীয় ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কোন্দল সংঘর্ষের রূপ নিলে তা প্রতিহত করার কথাও বলা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো ধরনের নাশকতা ও বড় ধরনের গোলযোগের শঙ্কা করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কা না থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভোটের দিন বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্মানিত ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করে কমিশনের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে হবে। জনগণের মধ্যে একটি ভ্রান্ত মনোভাব আছে, সেটা পাল্টাতে সবার সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আইনানুগকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অতীতের মিথ্যা প্রচারণার অভিজ্ঞতার আলোকে ভোটের দিন ইন্টারনেটের গতি মন্থর করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে কমিশন এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। বৈঠকে সিইসি বলেন, এটি করা হলে সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং দেশে/বিদেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কমিশনের কাজেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এটি করার হয়তো প্রয়োজনীয়তা আছে কিন্তু এটাকে ব্যাখ্যা করা হবে নেতিবাচকভাবে। বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে হলুদ সাংবাদিকতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজবের প্রচার ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতে কোনো ধরনের ডিস ইনফরমেশন ও মিস ইনফরমেশন ছড়িয়ে না পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। তবে এসব বিষয়ে অতীব সতর্ক থাকতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলের কাউন্সিলর পর্যায়ে কোন্দলের বিষয়েও আলোচনা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন্দল থাকতেই পারে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হলে বা সংঘর্ষের রূপ নিলে তা প্রতিহত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর।

শঙ্কা দেখেছ না ইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো ধরনের নাশকতা ও বড় ধরনের গোলযোগের শঙ্কা করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কা না থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভোটের দিন বাড়তি পদক্ষেপও থাকছে। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কথা বলেন। নির্বাচন ভবনে গতকাল বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত এ আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সভাপতিত্ব করেন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন বরিশাল ও খুলনা এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা নেই : সভা শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানান, ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, সভায় নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কার্যক্রম কীভাবে সমন্বয় হবে সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছে কমিশন সেই বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে। ইসির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। উপস্থিত সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। যে যার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। মাঠ প্রশাসন থেকে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এই নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের কোনো নাশকতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো শঙ্কা এখনো নেই বলেন ইসি সচিব।

চ্যালেঞ্জ শঙ্কা নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা : নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

আইজিপি জানান, বৈঠকে তফসিল ঘোষিত ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা সহযোগিতা প্রদান ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি। নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবাধ, ?সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ প্রয়োজন, তা গ্রহণ করব। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের স্থানীয় ইউনিট সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। তিনি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে দায়িত্ব পালন করা দরকার পুলিশের প্রতিটি সদস্য তা যথাযথভাবে পালন করছে। সব ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জঙ্গিসহ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সিটি নির্বাচনে কোনো ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়নি। আমরা আশা করছি, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের দিনে শঙ্কা আমরা দেখছি না। তবে যে কোনো ধরনের উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

সর্বশেষ খবর