সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড

চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেশি। আর তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের তথ্য ছিল অনিরীক্ষিত। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন করে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি করে দেয়। এতে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৬৫ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপি। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের মোট ঋণের ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বর্তমানে খেলাপি। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবিধান উপেক্ষা করে যারা সময়মতো ঋণ ফেরত দেবে না তাদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে যুক্ত না করা, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধাও বাতিল করতে হবে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। তিনি বলেন, এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে না পারলে ঋণখেলাপিরা কোনো দিন টাকা পরিশোধ করবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। ব্যাংকগুলো নিজেদের ঋণ পুনঃতফসিল নিজেরাই করার ফলে চাইলেই খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। খেলাপি ঋণ আরও বেশি হবে। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর আগে গত ২৪ মে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। সেই সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর