মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোন দিকে যাবে জাতীয় পার্টি

এমপিদের অবস্থান ক্ষমতাসীনদের জোটে থাকা, শীর্ষ নেতারা বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্তের পক্ষে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

কোন দিকে যাবে জাতীয় পার্টি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ভোট করতে চান জাতীয় পার্টির (জাপা) অধিকাংশ সংসদ সদস্য। তবে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা চান নির্বাচনের আগে বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে।

পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নির্দেশ দিয়েছেন বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। তিনি ইতোমধ্যে ৪২টি জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেছেন। যদিও সম্মেলনের বিষয়ে জি এম কাদেরের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এসে বর্তমান ও ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, আগামী নির্বাচনে কোন পথে যাবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনী পরিস্থিতি এখন অনিশ্চিত। আপাতত আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রার্থী ঠিক করছি। জাতীয় নির্বাচনে জোট না এককভাবে অংশ নেব তা অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। রওশন এরশাদের সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

জাপার একাধিক সংসদ সদস্য এবং শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারক জানান, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্য হিসাব কিছুটা ভিন্ন। যোগ্য প্রার্থী সংকটের মধ্যেও সারা দেশে ৩০০ আসনে একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। পাশাপাশি সরকারি দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনের পথও খোলা রাখছে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে ৭০ আসন চাইতে পারে দলটি। অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ চান আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকেই আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে। জি এম কাদেরের ইচ্ছা পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে। রাজনৈতিক কারণে যত কথাই বলা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে পারে এরশাদের হাতে গড়া দলটি। সংসদ সদস্যরা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার জোট শরিক দলগুলোকে ৪৫টি আসনে ছাড় দেয়। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৯টি আসন। এর মধ্যে ২২ জন নির্বাচিত হন। বাকি চারজন সংরক্ষিত নারী সদস্য। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে এবার আরও বেশি জোটগত মনোনয়ন পাওয়া যাবে বলে দলীয় নেতাদের অভিমত। তারা বলছেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনায় ৩০০ আসনের মধ্যে ৫০ জন যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা কষ্টসাধ্য। ৫০ জন একক নির্বাচনে অংশ নিলে কয়টি আসন পাওয়া যাবে তা দলের শীর্ষ নেতারা অবগত রয়েছেন। তাই পার্টির একটি বড় অংশ চায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেনদরবার করে যত আসন নেওয়া যায়, ততই নিরাপদ।

রওশন এরশাদের মুখপাত্র ও সম্মেলনের প্রধান সাংগঠনিক সমন্বয়কারী কাজী মামুনুর রশীদ জানান, বেগম রওশন এরশাদের নির্দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি আসনে প্রার্থী বাছাই চলছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ও কক্সবাজার জেলায় প্রতিনিধি সভা করেছেন। সারা দেশে কমিটি গঠন চলছে। ইতোমধ্যে ৪২টি জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পার্টিকে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও জাতীয় পার্টিতে সংকট দেখা দেয়। সে সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। নির্বাচনের পর আবার তা সমাধান হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট নেতারা মনে করছেন, অদৃশ্য সুতার টানে অনিশ্চিত ভাগ্যের পেছনে ছুটে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের পর ফের অদৃশ্য সুতার টানেই হয়তো একত্র হবে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

সর্বশেষ খবর