প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার শুধু দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রকৃতপক্ষে কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি শুধু স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী বিএনএস শের-ই-বাংলার নবনির্মিত ঘাঁটি, ৪১টি পিসিএসের চারটি জাহাজ ও চারটি এলসিইউয়ের কমিশনিং অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিএনএস শের-ই-বাংলা, ৪১ পিসিএসের চারটি জাহাজ ও চারটি এলসিইউয়ের ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। বাসস
কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল বিএনএস শের-ই-বাংলার বেস কমান্ডার এবং চারটি জাহাজের কমান্ডার ও ৪১ পিসিএসের চারটি এলসিইউয়ের কাছে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনএস শের-ই-বাংলা ঘাঁটি এবং ৪১ পিসিএসের চারটি জাহাজ ও চারটি এলসিইউয়ের নেমপ্লেটও উন্মোচন করেন। পরে এই প্রথমবারের মতো নৌ-ঐতিহ্য অনুযায়ী বিএনএস শের-ই-বাংলা ঘাঁটি, চারটি জাহাজ ও চারটি এলসিইউতে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়; যা নৌবাহিনীতে ‘রঙ’ নামে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নৌবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে তারা আন্তর্জাতিক স্তরের যোগ্যতা ও মান অর্জনের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠেছে। আমরা সেই উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার কেনার পাশাপাশি সাগরে নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে। নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১৪ বছরে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ অর্জনে নৌবহরে এভিয়েশন উইং ও সাবমেরিন যুক্ত করে নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ বিশ্বে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনীতে সর্বাধিকসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে হেলিকপ্টার এবং টহল বিমান ও বিশেষায়িত বাহিনী স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ দ্বারা সজ্জিত নেভাল এভিয়েশন তৈরি করা হয়েছে। জাহাজ নির্মাণের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব জাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। আমাদের নৌবাহিনী ইতোমধ্যে অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘বায়ার নেভি’ থেকে ‘বিল্ডার নেভি’-তে পরিণত হয়েছে। বিএনএস শের-ই-বাংলা ঘাঁটি এবং নৌবাহিনীর আটটি জাহাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এ ঘাঁটি ও জাহাজগুলো তাদের নিজ নিজ অপারেশনাল কার্যক্রমের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা ছাড়াও সমুদ্রে দেশি-বিদেশি জাহাজ এবং উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনী চোরাচালান ও অবৈধ মাছ ধরা প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এ বাহিনী উপকূলীয় জনগণকেও সহায়তা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশবিদেশে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাজের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনী শুধু দেশেই নয়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও বিশাল অবদান রেখে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বহুজাতিক মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে ভূমধ্যসাগরে সফলভাবে মোতায়েন করায় বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বদলে গেছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধিশালী, স্মার্ট দেশ। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবেই আমরা বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।’