পর্যটননগরী কক্সবাজারে চালু হলো বহুল প্রত্যাশিত রেল। গতকাল দুপুরে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নগরী কক্সবাজারে এতদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক ও বিমান পথে পর্যটকদের আসার সুযোগ থাকলেও গতকাল থেকে যুক্ত হলো নতুন এক যোগাযোগ ব্যবস্থা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল সকালে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বেলা ১১টায় কক্সবাজারের ঝিলংজায় আইকনিক রেলস্টেশনে আসেন তিনি। নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনে পৌঁছালে স্থানীয় শিশু শিল্পীদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। পরে শিশু শিল্পীদের সঙ্গে ছবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক সুধী সমাবেশে যোগ দেন তিনি। সুধী সমাবেশের বক্তৃতা শেষে সুইচ টিপে উদ্বোধনের ঘোষণা দেন সরকারপ্রধান। এর আগে বর্তমান সরকারের সময়ে রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং। কক্সবাজার রেল যোগাযোগের উদ্বোধনের পর আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কাটেন শেখ হাসিনা। এরপর প্ল্যাটফরমে থাকা ট্রেনের কাছে যান তিনি। সেখানে রেলের নিয়ম অনুসারে সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন ছাড়ার সংকেত দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বাঁশিতে ফু দেন তিনি। ট্রেন ছাড়ার আগে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১টা ২৮ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ট্রেনটি রামুর উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা ১টা ৫৪ মিনিটে ট্রেনটি রামু স্টেশনে পৌঁছায়। ২৬ মিনিটের ট্রেন যাত্রায় অন্য বগিতে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। রামু ক্যান্টনমেন্টে দুপুরের খাবার শেষে মহেশখালীর মাতাবাড়ীতে জনসভা ও গভীর সমুদ্রবন্দরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ট্রেন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করব এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কক্সবাজার রেলপথ। কক্সবাজারে আমাদের দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত আছে। অথচ পর্যটন কেন্দ্রটি ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। মহেশখালী একেবারে অবহেলিত ছিল। বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হব, এটাই লক্ষ্য। এসব বিবেচনা করে রেলপথ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেহেতু দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ আগেই ছিল। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যাতে এই রেলপথ সংযুক্ত হয় সে ব্যবস্থা করব। এর আগে উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল আছে। যশোর, খুলনা হয়ে মোংলা পর্যন্ত রেল সংযোগ তো আছেই। একটা কাজ আমরা করতে চাই- পর্যটকদের জন্য একটা রেল থাকবে যেটা দেশের বড় বড় কটা স্টেশন ধরবে। অল্প সময়ে যাতে বড় শহরগুলো থেকে কক্সবাজার পৌঁছায়। সারা দেশের সঙ্গে এই পর্যটক ট্রেন যুক্ত থাকবে। এটা পরিকল্পনা আছে আমাদের। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সংযোগ হওয়ার বিষয়টি গৌরবের বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে রেল সংযোগ একটি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। কক্সবাজার এখন থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে উন্মোচিত হলো বহুমাত্রিক সম্ভাবনার দ্বার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলকে আগামী তিন বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ শুরু হয়েছে। ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের সঙ্গে এটা সংযোগ হবে এবং এটাকে সঠিক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাকে নিজের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করতে হবে। এটা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এটার সঙ্গে থাকতে হবে সবাইকে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে একে রেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হলো রেল লাভজনক না। এই রেল সাধারণ মানুষের চলাচলের, পণ্য পরিবহনের। এটা নিয়ে লাভ-ক্ষতির চিন্তা করা যায় না। আমরা সরকার গঠনের পর রেল আলাদা মন্ত্রণালয় করে সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করা হলো। আলাদা বরাদ্দ করা হলো। ১৫ বছরে ৮৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ ও রেল বৃদ্ধি করা হলো। শেখ হাসিনা বলেন, রেলে কক্সবাজার আসা যাবে। এটা স্বপ্ন ছিল কিন্তু এটা বাস্তবে রূপ নিল। ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেল আসছে। পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার আসার উদ্যোগ নেওয়া হবে। উত্তর অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হবে এই রেললাইন।
শিরোনাম
- টানা বর্ষণে ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যা, ৪১ জনের প্রাণহানি
- ফের উত্তপ্ত নেপাল, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী সুশীলার
- ১৬ বছরের কম বয়সীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করল অস্ট্রেলিয়া
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: মার্কিন শান্তি প্রস্তাব মানবে না ইউরোপ
- ইন্দোনেশিয়ায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর শত শত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে
- লঙ্কানদের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেল জিম্বাবুয়ে
- আজ সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া
- বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে ইসির সভা ৩০ নভেম্বর
- ইসির ৯ কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন
- জাতির গর্বিত প্রতিষ্ঠান সশস্ত্র বাহিনী: তারেক রহমান
- জাতিসংঘের কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলন ভেন্যুতে ভয়াবহ আগুন
- দেশের বাজারে কমলো স্বর্ণের দাম
- তরুণরাই গড়বে সুন্দর বাংলাদেশ: ইসরাফিল খসরু
- রুশ গোয়েন্দা জাহাজ থেকে লেজার নিক্ষেপ, যুক্তরাজ্যের কড়া হুঁশিয়ারি
- নেত্রকোনায় ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার আটক, ৭ দিনের কারাদণ্ড
- ফটিকছড়ি প্রেস ক্লাবের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন
- সীমান্তে কোটি টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ করেছে বিজিবি
- তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে নারীর নিরাপত্তা উন্নত হবে: শামা ওবায়েদ
- গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কাতারের নিন্দা
- ভারতীয় বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আবারও বাড়ালো পাকিস্তান
রেল গেল পর্যটন শহরে
আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার থেকে
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর