শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

রিমান্ডের জিহাদকে নিয়ে গোয়েন্দা টিম খুঁজছে লাশের টুকরো

কলকাতা প্রতিনিধি

এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন জিহাদ হাওলাদারকে আদালতে তুলে গতকাল ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দা টিম শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুঁজে বেড়িয়েছে আনারের লাশের টুকরোগুলো। এ টিম বৃহস্পতিবারও তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল। অভিযান চলতে থাকবে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও সকাল থেকে ফের ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় সিআইডি পুলিশের প্রতিনিধি দল অভিযান চালায়। পাশাপাশি তল্লাশি অভিযানে সহায়তা করতে কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদেরও সহায়তা নেওয়া হয়।

এরপর বিকালে আদালত থেকে অভিযুক্ত জিহাদকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি জিরানগাছা খাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সিআইডি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পোলেরহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায় খালে দুর্যোগ মোকাবিলা দল নামানো হয়, পাশাপাশি লাশের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে সন্ধ্যা নামার আগেই একটি থলে উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদরা ওই থলেটি একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করার পর রটনা ছড়ায় ওই থলের মধ্যে এমপি আনারের লাশের টুকরো থাকতে পারে। যদিও তার ভিতর থেকে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।

আদালতে জিহাদ : আনার হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃত জিহাদ হাওলাদারকে শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসত জেলা ও দায়রা আদালতে তুলে বিচারক শুভঙ্কর বিশ্বাসের কাছে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে তিনি ১২ দিনের সিআইডি হেফাজত মঞ্জুর করেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ।), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা।), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)- এ চার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়। এ মামলায় সর্বোচ্চ রায় হিসেবে বিচারক আমৃত্যু যাবজ্জীবন বা মৃত্যু দন্ড দিতে পারে।

এ মামলা নিয়ে বারাসত আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে বক্তব্য দেন আইনজীবী শান্তময় বসু। তিনি বলেন, আদালতে ঢোকা বা বেরোনোর সময় জিহাদের মুখ ছিল কাপড়ে ঢাকা। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করলেও তার কোনো উত্তরই দেননি। বারাসাতের আদালতেও ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়।

তবে এদিন আদালতে জিহাদের হয়ে কোনো আইনজীবী সওয়াল করেননি। এ হত্যাকান্ডকে নৃশংস আখ্যা দিয়ে তার পাশে দাঁড়াননি তারা।

২৪ বছর বয়সি জিহাদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার বারাকপুর গ্রামে। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায় আততায়ীরা মুম্বাই থেকে জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে আসে। বেশ কয়েক বছর ধরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী জিহাদ মুম্বাইতে বাস করছিল। দুই মাস আগে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহিন। এ শাহিনই পরিকল্পিত জঘন্য হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী।

রংমিস্ত্রি থেকে কসাই জিহাদ! : ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে খুলনার দিঘলিয়ার জিহাদ হাওলাদার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে ভারতের সিআইডি। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করতেন বলে জানান তারা। বৃহস্পতিবার কলকাতার নিকটবর্তী বনগাঁ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

জানা যায়, জিহাদ দেশে থাকতে ছিলেন রংমিস্ত্রি। এক পর্যায়ে চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়ার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এমপি আনারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। হাড়-মাংস আলাদা করা হয়। জিহাদসহ চারজন মিলে এ কাজ করেন বলে কলকাতার পুলিশ জানায়।

গতকাল খুলনার দিঘলিয়ার বারাকপুরে জিহাদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড়। জিহাদের স্ত্রী মুন্নী বেগম জানান, ‘এত বড় ঘটনার কিছুই আমরা জানি না। দেড় বছর ধরে সে বাড়িতে আসে না। ৯ মাস আগে মোবাইলে তার সঙ্গে একবার কথা হয়েছিল। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজখবর নেই।’ স্থানীয়রা জানান, জিহাদের বাবা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার পেশায় ছিলেন রংমিস্ত্রি। ছোটবেলা থেকে রঙের কাজে বাবাকে সহায়তা করতেন জিহাদ। এক পর্যায়ে নিজে রংমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। গোপনে চরমপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০২০-২৩ সালের মধ্যে দিঘলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে ও মারামারির ঘটনায় জিহাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। এরপর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। ভারতের মুম্বাইয়ে আশ্রয় পান তিনি। প্রায় এক বছর ধরে সেখানেই রয়েছেন বলে জানা যায়। সেখানে মাংসের দোকানে মাংস কাটার কাজ করে কসাই জিহাদ হিসেবে পরিচিতি পান। জিহাদের বাবা জয়নাল আবেদীন জানান, ‘তার জন্য আমার অন্য দুই ছেলের মানসম্মান নষ্ট হচ্ছে। ওর সঙ্গে কোনো কথা হয় না। শুনেছি ঢাকায় কী একটা ঝামেলায় জেলে ছিল। কয়টা মামলায় আসামি হয়, চার্জশিটও হয়েছিল। ওর মৃত্যু হলে আমরা বাঁইচে যাই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর