বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতির দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে নিজেদের দাবিনামা পেশ করেছেন প্রশাসন বাদে অন্য ২৫ শ্রেণির ক্যাডার কর্মকর্তারা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় সচিবালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সচিবালয়ের গেটগুলোতে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশের প্রধান গেট কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন বিগত ১৭ বছর পদ, পদবি এবং পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বৈঠক থেকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। ৩ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সভায় উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পিএস আবদুুস সাত্তার। তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগের পদলেহী সচিব থেকে অফিস সহায়ক সবার অপসারণের আলটিমেটাম দেন।
এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে অ্যাডমিন ক্যাডার বাদে অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবিনামা নিয়ে দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডির (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) কক্ষে জড়ো হন। তারা বলেন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করলেও একটি নির্দ্দিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তারা সব ধরনের সুযোগসুবিধা ভোগ করছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন অন্য ২৫ ক্যাডার শ্রেণির কর্মকর্তারা। ২৫টি বিশেষজ্ঞ ক্যাডার হতে সম্পূর্ণ মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগত উপসচিবদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে, প্রকৃত অর্থে সব মন্ত্রণালয়কে পেশাভিত্তিক ও দক্ষ জনবলের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারা ২০০২ সালের সরকারি বিধিমালার উল্লেখ করে জানান, উপ-সচিব থেকে সব শ্রেণির ক্যাডারদের সাধারণ ক্যাডার বিবেচনা করে মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির বিধান থাকলেও সে বিধান রক্ষা করা হচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে মাত্র ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বাকি ৫৫ শতাংশই বিভিন্ন কোটার অন্তর্ভুক্ত। কর্মকর্তারা এসব কোটা প্রত্যাহারের দাবি জানান। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব জিহাদ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ প্রশাসন ব্যতীত অন্য ক্যাডারের। মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের। অথচ পদোন্নতির ক্ষেত্রে চিত্রটি পাল্টে যায়। ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে। এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ বাড়ে। তারা ডিসি হয়ে মাঠপর্যায়ে দুর্নীতি করেন, আবার সচিবালয়ে এসে সেই দুর্নীতির তথ্য লোপাট করে দেন। মেধা ও জ্যেষ্ঠতা থাকার পরও অন্য শ্রেণির ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হয় না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জহিরুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির আদেশে ২৫ শ্রেণির ক্যাডার থেকে সবমিলিয়ে ১০ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু ১৩ থেকে ২২ ব্যাচের ৯০ শতাংশ কর্মকর্তাদের এখনো পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এর আগে সকালে, শেখ হাসিনা সরকারের সময় দায়িত্ব পালন করা সব সচিবের অপসারণ দাবিতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। বেলা ১১টা থেকে তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা সচিবদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীরা জানান, ‘শেখ হাসিনা সরকারের এ টু জেড অপসারণ চাই।’ দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা চলে যান।