কোটা সংস্কার আন্দোলনে বহুল আলোচিত ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!’ স্লোগানের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে এ স্লোগান নিয়ে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!’ জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী স্লোগান ছিল। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি ছিল তা এই স্লোগানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গিয়েছিল সেই রাতে। আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ সেই রাতেই ভেঙে গিয়েছিল। অস্ত্র ও বুলেটের মাধ্যমে আরও কয়েকটা দিন টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল কেবল।
তিনি আরও লিখেছেন, ইতিহাস একরোখা কোনো বিষয় নয়। ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’; ‘আমি নই, তুমি নই; রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানও সেই রাতে বহুবার দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনে বহুস্রোত ও কণ্ঠস্বর এসে মিলেছে। সবাই সব সময় এক বক্তব্য ধারণ করেছে এরকম নয়। বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ীও বক্তব্য-কর্মকৌশল বদল হয়েছে বহুবার। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষেও বহু গুণগান গাওয়া হয়েছে একসময়। ২০১৮ সালেও হাসিনা ও মুজিবের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। পরে বুকে রাজাকার লিখে সেই আন্দোলন গতি পেয়েছে। একটা আন্দোলনে অনেক ডাইমেনশন থাকে এবং বহু পরস্পরবিরোধী ঘটনাও একসঙ্গে ঘটতে পারে। এই সামগ্রিকতাকে ধারণ করেই প্রকৃত ইতিহাস রচিত হয়।নাহিদ লিখেছেন, রাজাকার ইস্যুটিকে পরিকল্পিতভাবে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল এবং তার ফলশ্রুতিতেই পরদিন মিছিলে হামলা করা হয়। আর এ আন্দোলনে যেহেতু নারী শিক্ষার্থীরা ছিল মূল শক্তি, তাই মেয়েদের ওপর নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়। তারপরের ঘটনা সবাই জানেন। ফ্যাসিস্টদের শেষ রক্ষা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই সমন্বয়ক পোস্টের শেষ অংশে লিখেছেন, ১৫ জুলাই সকালে আমাকে বহু মিডিয়া ফেইস করতে হয়েছে রাজাকার স্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে। আমার ব্যাখ্যাটি ছিল অনেকটা এরকম- রাজাকার শব্দের কোনো প্রাসঙ্গিকতা এই আন্দোলনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাজাকার ইস্যুর অবতারণা করেছেন এবং শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে অপমান করেছেন। প্রতিউত্তরে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে বিদ্রুপ করেছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ট্যাগ দিয়ে এ আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। মূলত আন্দোলনকে দমন করার জন্যই রাজাকার ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এ বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।