আয়নাঘরে রাষ্ট্রের নাগরিকদের গুম করার জন্য আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত কোনো বাহিনীকে দায়ী করা হবে না বলে জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে কেউ ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে দায়ী হয়ে থাকলে তাদের প্রত্যেককেই বিচারের আওতায় আনা হবে বলেও জানানো হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারের নির্দেশে যেসব গুম বা নির্যাতন করা হয়েছে- এর সঙ্গে রাষ্ট্রের একটি বিশেষ বাহিনীর জড়িত থাকা এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি কীভাবে রাষ্ট্রের অনেক নাগরিককে একটা সিক্রেট প্রিজনে নিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল। এই নির্যাতনের সঙ্গে অনেকে জড়িত এবং কারা সুস্পষ্টভাবে জড়িত এটা তদন্ত করে দেখতে একটি কমিশন কাজ করছে। এখানে আলাদা করে কোনো বাহিনীকে সেভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। কোনো বিশেষ বাহিনীকে এটার জন্য আলাদা করে দায়ী করাও হয়নি। উপ প্রেস সচিব বলেন, আয়নাঘরে গুম বা নির্যাতনের জন্য কেউ ব্যক্তিগতভাবে বা সমষ্টিগতভাবে দায়ী হয়ে থাকলে তাদের প্রত্যেককেই বিচারের আওতায় আনা হবে, যা বর্তমান সরকার আগেই জানিয়েছে। সেই আঙ্গিকেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
যেসব সিক্রেট জোনে আয়নাঘর আছে, সেখানে মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, যেহেতু গণভবনকে ঘিরেই মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং এটি গত ১৫ বছরের নির্যাতন এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে; সে কারণে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন গণভবনে যদি আয়নাঘরের একটি রেপ্লিকা থাকে- তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন এটি দেখতে যাবে তখন তারা আয়নাঘরের ভয়াবহ নির্যাতনের বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। যেসব স্থানে আয়নাঘর আছে সেগুলোতে মিউজিয়াম করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি। আয়নাঘরে এখনো অনেকেই গুম এবং নিখোঁজ রয়েছেন বলে যে অভিযোগ আসছে- সে সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে গঠিত একটি কমিশন পুরোদমে কাজ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে যে হিউম্যান রাইটস অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং এর বাইরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো প্রতিষ্ঠান যারা কাজ করছে- তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা বলেছেন, যে লোকগুলোর খোঁজ পাওয়া গেছে, তার চেয়ে আরও অনেক বেশি লোক নিখোঁজ আছেন। প্রেস সচিব বলেন, অনেকে যেমন ধরেন গ্রামের দিকে নিখোঁজ হয়েছেন। হয়তো কেউ ভয়ে প্রেসের সামনে বলেনি যে তার স্বামী, তার ভাই বা তার বাবা বা তার সন্তান নিখোঁজ আছেন। তো এসব রিপোর্ট তাঁরা (গুম বিষয়ক কমিশন) পাচ্ছেন এবং আমাদের জানাচ্ছেন।
প্রেস সচিব আরও বলেন, আয়নাঘরে যারা নিখোঁজ আছেন, গঠিত প্যানেল (কমিশন) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছেন, যাচাই-বাছাই করছেন এবং বাংলাদেশে কতগুলো আয়নাঘর ছিল- সেগুলোর স্ট্যাটাস কী-এসব নিয়েও তারা কাজ করছেন। এই প্যানেল যখন রিপোর্ট দেবে- সেখানে সব তথ্য থাকবে। আয়নাঘর থেকে ফেরত আসা অসহায় ও নির্যাতিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্র কোনো প্রণোদনা দেবে কি না এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।