স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার (সংসদের) মেয়াদ সংবিধানে যে পাঁচ বছর আছে তা চার বছর হওয়া উচিত। পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের মেয়াদ যদি চার বছর হতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদ চার বছর হতে অসুবিধা কোথায়। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নিয়েও আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর হওয়া উচিত। গতকাল সচিবালয় গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ-এর সভাপতি ফসিহ উদ্দিন মাহতাব।
উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ এক সময় তিন বছর ছিল। সেটি বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। কিন্তু দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধিতে লাভ কী হয়েছে, তার কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কখনো কোনো মূল্যায়নও করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নিয়েও আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর হওয়া উচিত। কারণ, তিন বছর মেয়াদ হলে ১৫ বছরে ৫ বার নির্বাচিত প্রতিনিধি এখানে আসবেন। ফলে, অধিক সংখ্যক জনপ্রতিনিধি এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের অপসারণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। সময় সাপেক্ষে অবস্থা অনুযায়ী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই বিষয়ে আমাদের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা আছে। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভায় সেবা প্রদান ব্যাহত না হতে ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করণের জন্য শিগগিরই সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভায় পূর্ণ মেয়াদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের দেশে রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে খুব একটা কাজ হয় না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে জোর দিতেই বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়েছে।
শিগগিরই সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, শিগগিরই ১২টি সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করা হবে। শুরুতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সিটি করপোরেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগের কাজ সম্পন্ন হবে।
গতকাল বিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মিলনায়তনে ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা যথাযথভাবে নিশ্চিতকল্পে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় রাস্তাঘাট মেরামত ও উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধন কার্যক্রমসহ সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদেয় সেবা প্রদান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় গণকটুলী সুইপার কলোনিতে হরিজন সম্প্রদায়ের পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে পাঁচজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অনুকূলে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
হাসান আরিফ বলেন, এলাকাভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় নানা রকম সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়ভাবে বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দখলদারির চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা চর দখলের মতো অবস্থা হয়ে গেছে। এলাকাভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ কারা করবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল চলছে।
তিনি বলেন, বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে এমন কোন্দল, দখলদারি দূর করতে আমরা শক্ত অবস্থানে যাব। প্রয়োজন হলে এ সমস্যা সমাধানে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হব। তবুও কোনোভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে, বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে এলাকাভিত্তিক দখলদারির স্থান দেওয়া যাবে না।
উপদেষ্টা জানান, রাস্তার পাশের ফুটপাতগুলো মেরামত জরুরি। আমাদের ঢাকা শহরে ব্লক বা টাইলস দিয়ে ফুটপাত তৈরি করা হয়। কিছু দিন পর সেই টাইলসের নিচের মাটি বা বালু সরে যায়। তখন সেই ফুটপাতের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে আর চলাচল করা যায় না। দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় থাকে, ফলে পথচারীদের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ঢাকায় আরেকভাবে ফুটপাত করা হয় তা ঢালাইয়ের মাধ্যমে। মাঝে মাঝে ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানের জন্য এসব ফুটপাত আবার খুঁড়ে ফেলতে হয়। এর ফলে সিটি করপোরেশন বা সরকারের নতুন করে ফুটপাত সংস্কারের বরাদ্দ দিতে হয়। এ কারণে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। এ জন্য ফুটপাত সংস্কারে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা নতুন কিছু চিন্তা করেন। যা দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা যায় এবং উন্নয়নটা যেন দীর্ঘমেয়াদি হয়। এর আগে বৈঠকে এ চার সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কাজ করার নানান চ্যালেঞ্জ, সমস্যা, কর্মপদ্ধতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।