৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের দিনেই দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী শমী কায়সার। তাড়াহুড়ো করে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে ছিলেন ৭০ লাখ টাকা। আগে থেকেই ঘরে থাকা মোটা অঙ্কের আরও টাকা নিয়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টাও করেছিলেন। তবে সীমান্ত থেকে সবুজসংকেত না পেয়ে ফের ঢাকায় ফিরে আসেন। আত্মগোপনে ছিলেন ঢাকারই বিভিন্ন এলাকায়। সর্বশেষ উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর বাসা থেকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নেয় তিন দিনের রিমান্ডে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তারের অল্প সময় আগেই তিনি ওই বাসায় আত্মগোপনের জন্য যান। এদিকে তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার রওনক জাহান। তার বক্তব্য প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনরা কথা বলবেন। একাধিক সূত্র বলছে, শমী কায়সার বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মিডিয়া অঙ্গনের বাইরেও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হন। ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্সের ব্যানারে সরকারের অনেক প্রকল্প বাগিয়ে নেন যোগ্যতা না থাকার পরও। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে ছিল তার একচ্ছত্র প্রভাব। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়াসহ অনেক কাজ নিজের প্রতিষ্ঠানের নামেই বাগিয়ে নেন নানা পরিচয় ব্যবহার করে। একটা সময় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতিও বনে যান এই অভিনেত্রী। সরকার পতনের দিন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গুলশান ব্রাঞ্চ থেকে নিজের ব্যক্তিগত এবং ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্সের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৫ লাখ, ২৫ লাখ এবং ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শমী কায়সার। বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় সম্পর্কে ছিলেন অভিনেত্রী শমী কায়সার। তাদের প্রেমের বিষয়টি অনেকেই আঁচ করতেন। তবে ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরই মধ্যরাতে শমী কায়সারকে নিয়ে জয়ের একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় অনেকেই তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। শেষ রাতের দিকে গুলশান থেকে শমীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন জয়। তবে অতিরিক্ত মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর কারণে রাজধানীর মালিবাগে জয়ের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। সড়কের ডিভাইডারের সঙ্গে ল্যাম্পপোস্টও ভেঙে পড়ে। বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আশপাশের মানুষ। কাছেই দায়িত্বরত এক কনস্টেবল এগিয়ে আসেন তাদের সাহায্যের জন্য। উল্টো তাকেই চড় বসিয়ে দেন জয়। তাকে চিনতে না পেরে সেই কনস্টেবলও জয়ের গায়ে হাত তোলেন। মুহূর্তেই ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা। তাদেরই হস্তক্ষেপে ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়। এ ঘটনার পরই মায়ের চাপে ভেঙে যায় তাদের প্রেম। তবে অনেক বড় বড় কাজে জয়ের সহায়তা নেন শমী। পরবর্তীতে ভারতীয় সিনে পরিচালক রিঙ্গোর সঙ্গে জড়িয়ে যান শমী। তবে রিঙ্গোর সঙ্গে ডিভোর্সের পর শমী বিয়ে করেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে। আরাফাত তার সাবেক স্ত্রী শমীকে ব্যবহার করেই জয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। সাবেক প্রেমিকার স্বামী বলে কথা!! যদিও এ বিয়েও ভেঙে যায় একসময়। তৃতীয় বিয়ে করেন শমী।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীও ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করে মাঠে সক্রিয় থাকতে মিডিয়া অঙ্গনের অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন তিনি। আত্মগোপনে থেকেও তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীসহ অন্যরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। উত্তরা পূর্ব থানার চার নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাইস্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে মামলা করেন। শমী কায়সার এ মামলার ২৪ নম্বর আসামি।