আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় আহত হওয়া অনেকে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল, পঙ্গু হাসপাতাল, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন তারা। সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসাসহ অঙ্গ হারানো ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের দাবি জানান এই আহত ও তাদের স্বজনরা।
গত বুধবার পঙ্গু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন আহতরা। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তিনি তিন তলার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে না যাওয়ায় বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে রাত আড়াইটায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সহকারী (স্বাস্থ্য) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা শেষে হাসপাতালে ফেরেন আহতরা।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৮৪ জন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০-এর বেশি আহত রোগী পঙ্গু হাসাপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে হাত-পা কাটা গেছে ২১ জনের, যার মধ্যে ১৭ জনের পা এবং চারজনের হাত কাটা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে আহত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই পরিস্থিতি রাজধানীর অন্য হাসাপাতলগুলোতেও। পঙ্গু চিকিৎসাধীন থাকা আন্দোলনরত আহত শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, আমাদের সামান্য চিকিৎসা দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে নয়টি অপারেশন করা হয়েছে, তার পরও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদের অপারেশনে শুধু নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই ১ লাখ টাকা দিক এবং ভালোমানের চিকিৎসাসেবা দিক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর কাকরাইলে আহত হন আইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মিরাজ। তার দুই চোখে গুলি লেগেছে। তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই বিকালে কাকরাইলে বিক্ষোভ করতে গিয়ে চোখে গুলি লাগে। এর পর থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ৪২২ নম্বর রুমের ৪৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। আমার ডান চোখে রেটিনা ছিঁড়ে গেছে, বাম চোখে সীমিত দেখতে পাই। চিকিৎসকরা বলেছেন, ডান চোখের চিকিৎসা দেশে নেই। তাই আমরা উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলাম।
৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ একজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন মিজানুর রহমান। পুলিশের ছোড়া গুলি তার ডান চোখে এসে লাগে। তিনি বলেন, সার্জারি করে আমার চোখের গুলি বের করা হয়েছে। কিন্তু আমি ডান চোখে কিছু দেখতে পাই না। রেটিনা ড্যামেজ হয়ে গেছে। কর্নিয়ার অবস্থাও ভালো না। আমরা সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানাই। এ ছাড়া পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি এক চোখ হারিয়েছি। আন্দোলনে অংশ নিয়ে অনেকেই তাদের দুই চোখও হারিয়েছেন। কেউই নিজের স্বার্থের জন্য আন্দোলনে আসিনি। যারা চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন তারা স্বাভাবিক কাজ করতে পারবেন না। তারা কী সারা জীবন অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকবেন? আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, যারা চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন, সরকার যেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। যাতে তারা বাকি জীবন চলেফিরে বাঁচতে পারেন।