বড় হাঁক-ডাক দিয়ে ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে প্রথম বাসসেবা চালু হয়েছিল। পরে আরও দুটি রুটে এই সেবা চালু হয়। সেই সময়ে দেড়শ বাস নিয়ে চালু হওয়া নগর পরিবহন গত তিন মাস বন্ধ রয়েছে। তবে নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। সব ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ৪২টি রুটে একযোগে চালু হবে নগর পরিবহন সেবা। রাজধানীতে গণ পরিবহনে শৃঙ্খলা আনা, যত্রতত্র যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা কমানোসহ নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে ঘটা করে চালু করা হয়েছিল ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। শুরুতে বেশ সাড়া পড়েছিল এই ব্যবস্থায়। শুরুর সাফল্যে পর্যায়ক্রমে এই সেবা আরও বিস্তৃত হওয়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তবে পুরনো বাসের বদলে নতুন বাস না আসা, ব্যবস্থাপনায় উন্নতি না ঘটা এবং মালিকদের অনাগ্রহের কারণে সেই প্রত্যাশার বেলুন চুপসে গেছে। দেড়শ বাস দিয়ে যাত্রা শুরু করা এ সেবা থেকে পর্যায়ক্রমে সরে গেছে বেসরকারি ১২৮টি বাস। ৫ আগস্টের পর সরকারি বিআরটিসিও বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা নগর পরিবহনের বাস ডিপো ছিল ঘাটারচর। সরেজমিন দেখা গেছে, ঘাটারচর বাস ডিপোতে ঢাকা নগর পরিবহনের কোনো বাস নেই। সেখানে প্রজাপতি, প্রস্থান ও রমজান পরিবহনের অনেকগুলো বাস দখলে নিয়েছে। ডিপোতে সারি সারি বাসগুলো রাখা হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে এবং যাত্রীদের আরামদায়ক পরিবহন সেবা দিতে ফের নতুন করে আবার ঢাকা নগর পরিবহন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৪২টি রুটে এই সেবা একযোগে চালু করা হবে। ঢাকার যে কোনো রুটে বাস চলতে হবে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায়। তথ্যমতে, ৩৮৮টি রুটকে সমন্বয় করে ঢাকা মহানগরীতে প্রাথমিকভাবে ৪২টি বাস রুটে রেশনালাইজ করা হয়েছে। তবে রুটগুলো ট্রাফিক সার্ভে করে আপডেট করা হচ্ছে। তবে রুটের সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫-এর মধ্যে থাকবে। ঢাকা নগর পরিবহন নামে শহরের গণ পরিবহন পরিচিত হবে। শহরের বাইরের সঙ্গে সংযোগকারী পরিবহনের নাম হবে শহরতলি পরিবহন। ৩৪টি রুট নগরের ও ৮টি রুট শহরতলির।
এ ক্ষেত্রে কোম্পানির নামে বাস রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ব্যক্তি নামে কোনো বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট দেওয়া হবে না। দুটি কোম্পানি এক রুটে চালাতে চাইলে জয়েন্ট ভেঞ্চার করে আসতে হবে। এক রুটে এক কোম্পানির বাস চলবে। কাউন্টার ও টিকিট ব্যতীত কোনো বাস চলবে না। টিকিটের সঙ্গে সঙ্গে র?্যাপিড ব্যবহারের সুযোগ রাখা হবে। ধাপে ধাপে র?্যাপিড পাসের প্রচলন শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে হাতিরঝিল চক্রাকার বাস ও ওয়াটার ট্যাক্সিতে শুরু হচ্ছে। এরপরে ঢাকার চাকা ও গুলশান চাকায় চালু করা হবে। এ ছাড়া ধাপে ধাপে বাসে অটো ডোর (নিউম্যাটিক ডোর) লাগানো হবে। সিটের সংখ্যা ও সিঁড়ির ধাপ বাড়ানো হবে। ড্যাশক্যামসহ ক্যামেরা বসানো হবে। একই সঙ্গে স্টপেজেও ক্যামেরা বসানো হবে। কোম্পানি থেকে ড্রাইভার ও হেল্পার নিয়োগ করা হবে। তারা কোনো ভাড়া আদায় করবেন না। ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় বাস পরিচালনা করতে বাস কোম্পানিগুলোকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ৩০ তারিখের মধ্যে কোম্পানিগুলো থেকে আবেদনগুলো নেব। তারপর আমরা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে রুট ঠিক করে দেব এবং কোম্পানির সিস্টেমে গাড়িগুলো পরিচালনা করব। আগামী ১১ ডিসেম্বর আমাদের আরেকটি মিটিং আছে। মিটিংয়ের আগে কমিটি সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেব। আশা করি, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে চালু করতে পারব। তিনি আরও বলেন, বাসগুলো নগর পরিবহন নামে চলবে, কিন্তু মালিকানায় থাকবে বেসরকারি কোম্পানি। তাদের নির্দিষ্ট রুট থাকবে। আমরা র্যাপিড পাস, অনলাইনে পেমেন্ট সিস্টেমে চলে যাব। যাতে ড্রাইভার ও হেলপারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না হয়।