হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি ও চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এদিকে কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার নগরীর কোতোয়ালি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- বাবলা ধর, সজল শীল ও দুর্লভ দাস। এ নিয়ে মোট ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ বলেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনজীবীর পরিবার। ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর। গতকাল জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেন। মিছিলে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন হেফাজত নেতা-কর্মীরা।
ঢাকার নিন্দা : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামক সংগঠনের সহিংস বিক্ষোভের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে গত বৃহস্পতিবার বিকালে সহিংস বিক্ষোভ করে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ। এ সময় তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছায়। এ ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেয় এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করে। ফলে ডেপুটি হাইকমিশনের সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুতুল পোড়ানোর তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ সরকার। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
চট্টগ্রামে মিছিল-সমাবেশ : ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। গতকাল জুমার নামাজের পর নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ থেকে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ওয়াসা মোড় ও জিইসি মোড় হয়ে ষোলশহর দুই নম্বর গেটে গিয়ে শেষ হয়। একই ঘটনার প্রতিবাদে নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাগপা। জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি আবু মোজাফফর মো. আনাছের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন জাগপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা সভাপতি তানিয়া আকতার রূপা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন। এ ছাড়াও আন্দরকিল্লাহ শাহি জামে মসজিদ থেকে আইনজীবী আলিফ হত্যার প্রতিবাদ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর। মিছিলটি আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে নগরীর মোমিন রোড, চেরাগী পাহাড় হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। ময়মনসিংহ মুর্শিদপুরে মাজার ও মসজিদে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন দেওয়া এবং আইনজীবী আলিফ হত্যার প্রতিবাদে নগরীর লালদীঘি চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ।
খুলনা : খুলনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে জেলা ইমাম পরিষদ। চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদ এবং খুনিদের ফাঁসির দাবি জানানো হয় সমাবেশে। গতকাল নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ।
নারায়ণগঞ্জ : আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম নারায়ণগঞ্জের নেতারা। গতকাল বাদ জুমা ডিআইটি রেল কলোনি জামে মসজিদের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
মুন্সিগঞ্জ : চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গজারিয়া উপজেলা শাখা। জুমার নামাজের পর ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন ও মিছিল করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা বিএনপি মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বিকালে বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল শেষে বাবুরবাড়ী জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বান্দরবান : বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন মুসল্লিরা। জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদ থেকে বের হয়ে মুসল্লিরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মূল মিছিলে যোগ দেন। পরে প্রেস ক্লাব চত্বরে এসে মিছিলটি শেষ হয়। সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। জুমার নামাজের পর জেলা শহরের মার্কাজ জামে মসজিদ এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়। পরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উত্তর তেমুহনীর আফনান চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়।
রাজশাহী : ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ওলামারা। জুমার নামাজের পর নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। এরপর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবারও জিরো পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশ করে।
হবিগঞ্জ : বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন হবিগঞ্জের মুসল্লিরা। জুমার নামাজ শেষে চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় বিভিন্ন মসজিদ থেকে খন্ড খন্ড মিছিলে যোগ দিয়ে কোর্ট মসজিদের সামনে সমাবেশ করেন।
পিরোজপুর : পিরোজপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাধারণ মুসল্লিরা। জুমার নামাজ শেষে সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন মুফতি জুবায়ের, মাওলানা হাফিজুর রহমান, মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ, মুফতি হাফিজুর রহমান, মুফতি আহসান উল্লাহ প্রমুখ।
বগুড়া : জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ নন্দীগ্রাম শাখা ও তৌহিদি জনতার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বাদ আসর নন্দীগ্রাম কলেজ মসজিদ থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। এতে বক্তব্য দেন মুফতি রফিকুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী, সাইদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, মুফতি মোসাদ্দেক বিল্লাহ, জুবায়ের হোসেন, আবু তালহা প্রমুখ।
মাদারীপুর : মাদারীপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সংগ্রামী মুসলিম জনতা। দুপুরে শহরের ইটেরপুল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুসল্লিরা। পরে শকুনি লেকের পাড়ে জড়ো হন তারা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলার আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা।
নরসিংদী : নরসিংদীতে মিছিল ও সমাবেশে করেছেন ছাত্র, জনতা ও বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা। জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা থেকে মুসল্লিরা নরসিংদী পৌরসভা মোড়ে সমবেত হন। পরে বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেশন রোডে এসে জড়ো হয়ে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার বিচার দাবি করেন তাঁরা।
সরকারকেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে : নয়াদিল্লি থেকে গৌতম লাহিড়ী জানান, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশে সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। আশা করি, সেটি তারা পালন করবে। গতকাল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার।’ ইসকন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে রণধীর বলেন, ‘ইসকন বৈশ্বিকভাবে প্রখ্যাত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আবারও বলব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’