দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দাপুটে কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার কারিগর ছিলেন তিনি। সব গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি। ডলারে ঘুষ খাওয়া সেই দাপুটে গুলশান আনোয়ার বর্তমানে অজ্ঞাত আশীর্বাদে আরও দাপুটে হয়ে উঠছেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে একসময় সংবাদপত্রে কলাম লিখলেও এখন পুরোদস্তুর বিএনপির কর্মী হয়ে গেছেন।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন গুলশান আনোয়ার। মামলা দায়ের এবং মামলার পর তিনি একাই তার তদন্ত করেন। গত ৩১ জানুয়ারি তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ মে উত্তরা পশ্চিম থানায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুবাইয়ে ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেন দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক এই গুলশান আনোয়ার। এই মামলা তদন্ত করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অর্থাৎ দুর্নীতিবাজ বানানোর কারিগর ছিলেন তিনি। দুদকে তাঁর দাপটে সবাই থাকতেন অস্থির। ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুই নন বাঙালির প্রথম রাষ্ট্রের স্রষ্টা’ শিরোনামে কলাম লিখেন গুলশান আনোয়ার প্রধান। এরপর আরও একাধিক কলাম তিনি লিখেছেন আওয়ামী সরকারের গুণকীর্তন করে। এরপরই দুদকের অন্য কর্মকর্তারা তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জানা যায়, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি দুদকের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল স্বাক্ষরিত এক আদেশে গুলশান আনোয়ার প্রধানকে ময়মনসিংহ কার্যালয়ে বদলি করা হয়। অদৃশ্য প্রভাব কাজে লাগিয়ে পাঁচ মাস পরই তিনি প্রধান কার্যালয়ে ফিরে আসেন। তবে দুদক সূত্র বলছে, ময়মনসিংহে বদলি হলেও গুলশান আনোয়ার সেখানে যাননি। তিনি উপপরিচালক হয়েও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন মহাপরিচালকের মতো রুম দখল করে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি সুবিধাও নিতেন। ঘুষ খেতেন ডলারে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয় দুদক। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাটি শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবে তাঁকে হয়রানির উদ্দেশ্যেই করা হয়। শুধু প্রধান উপদেষ্টার মামলাই নয়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপর বিএনপি নেতাসহ একাধিক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয় দুদক। সংস্থাটির সূত্র বলছে, গত ১৫ বছরে করা আরও অর্ধশতাধিক মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও মামলা করে দুদক। সেই মামলায় দ্রুত গতিতে সাজাও হয়। সাজা হওয়ার কারণে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এই গুলশান আনোয়ার।