টানা চার দিন প্রস্তাবিত সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি আবেদনের শুনানি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। শুনানি পর্যালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আসনগুলোর সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার কমিশনার, ইসি সচিব ও সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিশেষায়িত কমিটি কাজ করে, তারপর ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া ৩০ জুলাই প্রকাশ করে ইসি। এরপর দাবি-আপত্তি জানাতে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
সচিব জানান, মোট আপত্তি এবং সুপারিশ আবেদন এসেছে ১ হাজার ৮৯৩টি। ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩টা জেলার ৮৪টা আসন সম্পর্কিত ১ হাজার ১৮৫টি আপত্তি এবং ৭০৮টি পরামর্শ বা সুপারিশ পাওয়া যায়। পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় দিক থেকেই মতামত এসেছে। মূলত আপত্তিটা আগে শুনেছে। দাবি-আপত্তিগুলোর শুনানি করা হয়। রবিবার ৬টি জেলার ১৮টি, সোমবার ৯টি জেলার ২০টি, মঙ্গলবার ৬টি জেলার ২৮টি ও বুধবার ১২টি জেলার ১৮টি আসনের আবেদন শুনেছে কমিশন। ইসি সচিব বলেন, এখন যে মতামত পেয়েছি, সেগুলো আমরা লিপিবদ্ধের পর পর্যালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশ করব। এর আগে, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১ আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন ইসি। শুনানিতে সংসদীয় আসনের সীমানার দাবি ও আপত্তি নিয়ে আবেদনকারী ও তাদের পক্ষে আইনজীবীরা শুনানি করেন। দাবি ও আপত্তি বিষয়ে ইসি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনছেন এবং আইন ও বিধি অনুযায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। শুনানি শেষে পাবনার প্রতিনিধি ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, আমরা শুধু সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসন চাই। একইসঙ্গে বেড়া ও সুজানগর নিয়ে পাবনা-২ আসন চাই। এ দুটি আসন বিন্যাসের প্রস্তাবনা ২০১৮ সালে ছিল কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিরাজগঞ্জের প্রতিনিধি আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০১ সাল পর্যন্ত ৭টি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন কমিয়ে ৬টি আসন করা হয়। আমাদের দাবি আগে চৌহালী ও শাহাজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটা ইউনিয়ন মিলে যে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ছিল সে আসনটা আমরা ফেরত চাই। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ-১, সিলেট-১, ফরিদপুর-১ ও ৪, মাদারীপুর-২ ও ৩, শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি গ্রহণ করা হয়। ফরিদপুর-৪ আসনের প্রতিনিধি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ২০০১ সাল পর্যন্ত চরভদ্রাসন ও সদরপুর দুটি উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে ভাঙ্গা উপজেলা ফরিদপুর-৫ আসন ফরিদপুর-৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আমরা ফরিদপুর-৪ আসন ২০০১ সালের ন্যায় ফিরে পেতে চাই। একই সঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৫ আসন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের প্রতিনিধি বলেন, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-৬ আসন গঠিত। কিন্তু নাগরপুর উপজেলা একটি নদী বেষ্টিত এলাকা। তাদের সঙ্গে আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রয়েছে। আমরা দেলদুয়ার উপজেলাকে একক আসন হিসেবে টাঙ্গাইল-৬ আসন করার দাবি জানাচ্ছি। সিলেট-১ আসনের প্রতিনিধি বলেন, সিটি করপোরেশনের ২৫, ২৬, ২৭ ওয়ার্ড সিলেট-১ থেকে কেটে সিলেট-৩ আসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এ ওয়ার্ডগুলোকে সিলেট-১ আসনে অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি জানাই।